জাতিসঙ্ঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব : পক্ষে ভোট দেয়নি ভারতসহ যেসব দেশ
জাতিসঙ্ঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব - ছবি : সংগৃহীত
জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের প্রস্তাব গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে। প্রস্তাবটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ১০৪টি দেশ।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) সাময়িক আদেশ, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরু এবং মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুকে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো নতুন বিষয়গুলো এবারের প্রস্তাবে উঠে এসেছে। এ ছাড়া প্রস্তাবটিতে মিয়ানমারকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এগুলো হলো, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়াসহ সমস্যাটির মূল কারণ খুঁজে বের করা, রাখাইনে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ বিষয়ক প্রস্তাবটি ধারাবাহিকভাবে সমর্থন দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রস্তাবটি গৃহীত হলো। এটিকে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য সহিংসতার শিকার নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি জাতিসঙ্ঘের বিপুলসংখ্যক সদস্য রাষ্ট্রের শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও অকুণ্ঠ সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশ।
প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৩২টি দেশ এবং বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। ভোট দানে বিরত থাকে ৩১টি দেশ। প্রস্তাবটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের সমর্থন ও সহ-পৃষ্ঠপোষকতা পায়। ভোট না দেয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা; জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভেনেজুয়েলা। বিপক্ষে ভোট দেয়া দেশগুলো হলো : রাশিয়া, চীন, মিয়ানমার, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে ও লাওস।
ভোটে দেয়ার আগে প্রস্তাবটির সমর্থনে ইইউর পক্ষে জার্মানের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ওআইসির পক্ষে সৌদি আরবের স্থায়ী প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। স্থায়ী প্রতিনিধিরা আশা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবটি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দীর্ঘকাল ধরে চলমান দুর্দশা মোকাবেলায় অবদান রাখবে, নিজ বাসভূমিতে নিরাপদভাবে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে এবং মিয়ানমারকে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ ঘটাতে সাহায্য করবে। তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ইস্যু সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের শিকড় সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারেই নিহিত। প্রস্তাবটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার যে অনুকরণীয় মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার প্রশংসা করা হয়েছে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা মহামারীর বিস্তাররোধে বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টায় সমর্থন দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের জন্য মিয়ানমারকে নতুনভাবে চাপে ফেলবে। প্রস্তাবটি বিপুল ভোটে পাস হওয়ায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চলমান বিচারপ্রক্রিয়া আরো বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের কাক্সিক্ষত সমাধানে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব আন্তর্জাতিক রীতিনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক উৎস হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।