এখন তারা কেন পিপিই পরেন না?
এখন তারা কেন পিপিই পরেন না? - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের আত্মপ্রকাশের শুরুতে বাংলাদেশে পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছিলো৷ এটা নিয়ে দুর্নীতিও হয়৷ আর চিকিৎসকেরা বলেছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সবারই পিপিই দরকার৷
এমনকি এই পিপিইর অভাবে চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বিরত থাকার কথাও বলেছিলেন৷ তাদের কথা ছিলো কোভিড এবং নন-কোভিড যে ধরনের চিকিৎসাই হোক না কেন স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের পিপিই আবশ্যক৷ তাদের যুক্তি ছিলো পরীক্ষার আগে যেহেতু বোঝার উপায় নেই যে কে কোভিড আর কে নন-কোভিড রোগী তাই চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সবার পিপিই দরকার৷ শুধু তাই নয়, যারা সাধারণ মানুষকে সরাসরি বিভিন্ন ধরনের সেবা দেন তাদেরও পিপিই দরকার৷ এন-৯৫ মাস্কসহ এক সেট পিপিইর দাম তখন ছিল ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা৷
কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে৷ সাধারণ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক নার্সরা তো পিপিই ব্যবহার করছেনই না৷ এমনি কোভিড চিকিৎসায় পিপিই ব্যবহারে অনীহা দেখা যাচ্ছে চিকিসক-নার্সদের মধ্যে৷ আর কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা বলতে গেলে পিপিই ব্যবহার ছেড়েই দিয়েছেন৷ এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে কোনো জেনারেল ওয়ার্ডের চিকিৎসক নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী কেউই পিপিই পরিধান করছেন না৷ কেবল পিপিই নয় সামাজিক দূরত্ব মানা নিয়েও প্রশ্ন করা যায়৷ তবে তারা মাস্ক পরছেন৷ ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর দর্শনার্থীদের অনেককেই দেখা যায় মাস্ক ছাড়া৷
ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনটি কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত৷ সেখানে ওয়ার্ডগুলোর সামনে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড়৷ একটি ওয়ার্ডে ঢুকে দেখা যায় সেখানে নার্সরা পিপিই ব্যবহার করলেও চিকিৎসক পিপিই পরিধান করেননি৷ তবে তিনি মাস্ক, গ্লোভস ব্যবহার করেছেন৷
এখন শুধু কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিতরাই পিপিই ব্যবহার করছেন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন শুধুমাত্র কোভিড হাসপাতালও ও কোভিড ওয়ার্ড ছাড়া আর কেথাও পিপিই ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নাই৷ কিন্তু কোভিড হাসপাতালেও এই বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে অনেকেই উদাসীন৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘‘করোনার শুরুতে রোগী চিকিৎসক সবার মধ্যেই একটা আতঙ্ক ছিলো৷ কিন্তু এখন ভয় কেটে গেছে৷ আমরা সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের এখনও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক রেখেছি৷ আর কোভিড ওয়ার্ডের জন্য পিপিই বাধ্যতামূলক৷ তবে কোভিড ওয়ার্ডের কেউ যদি পিপিই না পরেন তাহলে ঠিক করছেন না৷’’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও মনে করে এখন আর সাধারণ রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিতদের পিপিই দরকার নাই৷ তাই তারা এখন আর সবাইকে এই পিপিই সরবরাহ করছে না৷ শুধু মাত্র সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলোকেই পিপিই দিচ্ছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘আমরা কেন, কেউই তো কোভিডের শুরুতে অনেক কিছু জানত না৷ মানুষ না জেনে তখন বস্তা বস্তা ক্লোরোফেন খেয়ে শেষ করেছে৷ অক্সিজেন লাগার কথাও জানত না৷ এখন আমরা অনেক কিছু জানছি৷ তাই এখন শুধু কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিতরাই পিপিই ব্যবহার করছেন৷ বাকিদের দরকার নাই৷’’
অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এই কথার সঙ্গে কোনো কোনো চিকিৎসক দ্বিমত করেন৷ তারা বলেন, এখন কোভিড ও নন-কোভিড রোগী মিশে গেছে৷ তাই চিকিৎসা সেবা যে ধরনেরই হোক না কেন, যারাই দেবেন তাদেরই পিপিই ব্যবহার করা উচিত৷ চিকিৎসকেরা তো এখনো আক্রান্ত হচ্ছেন৷ চিকিৎসক ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. নিরুপম দাস বলেন, ‘‘এখন কোভিডের আতঙ্ক অনেকটাই কেটে যাওয়ায় সাধারণ রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক নার্সরা পিপিই পরছেন না৷ কিন্তু পরতে হবে৷ নিরাপত্তার জন্যই পরতে হবে৷ কারণ এখন কোভিড ও নন-কোভিড রোগী মিশে গেছে৷ তাই সতর্কতা আরো বেশি প্রয়োজন৷ তবে কেউ না পরলে কী করার আছে?’’
তিনি জানান যে, কোভিড হাসপাতালেও এখন স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের কেউ কেউ সব ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করেন না৷ গাউন ব্যবহারে অনীহা আছে৷
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়ছে৷ এই শীতে করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আর এই কারণে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ বুধবার থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে মোবাইল কোর্ট কাজ শুরু করেছে৷ যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে৷ একই সঙ্গে তারা মাস্ক বিতরণও করছেন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে