প্রিন্সেস ডায়ানার প্রেম আবার আলোচনায়
প্রিন্সেস ডায়ানা - ছবি : সংগৃহীত
প্রিন্সেস ডায়ানার একটি সাক্ষাৎকার - যা ১৯৯৫ সালে বিবিসিতে প্রচারিত হবার পর সারা পৃথিবীতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল, তাতে বেরিয়ে এসেছিল প্রিন্স চার্লসের সাথে তার দাম্পত্যজীবন ভেঙে পড়ার পেছনের কাহিনি।
পঁচিশ বছর পর - সেই সাক্ষাৎকারের পেছনের কথিত ঘটনা আবার হৈচৈ তুলেছে ব্রিটেনে।
কারণ, অভিযোগ উঠেছে যে মার্টিন বশির নামে বিবিসির যে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন - তিনি প্রিন্সেস ডায়ানাকে ওই সাক্ষাৎকার দিতে রাজি করিয়েছিলেন কিছু জাল দলিলপত্র দেখিয়ে ।
অভিযোগটি তুলেছেন আর্ল স্পেন্সার - ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া প্রিন্সেস ডায়ানার ভাই।
তিনি বলছেন, বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বশির কিছু জাল ব্যাংক দলিলপত্র দেখিয়ে "অত্যন্ত অসৎ পন্থা ব্যবহার করে" তার বোনকে ওই সাক্ষাৎকার দিতে রাজি করিয়েছিলেন।
ব্রিটেনের কিছু দৈনিকে এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর এখন এর আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে - যে কী উপায়ে বিবিসি ওই সাক্ষাৎকার পেয়েছিল, এবং বিবিসির তখনকার সিদ্ধান্ত-গ্রহণকারী ব্যক্তিরাই বা কী ভূমিকা পালন করেছিলেন ।
বিবিসি ওই ঘটনার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের অঙ্গীকার করেছে। বুধবার বিবিসি ঘোষণা করেছে যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি লর্ড ডাইসন এক স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবেন।
প্রিন্সেস ডায়ানার বড় ছেলে ডিউক অব কেম্ব্রিজ উইলিয়াম একে সঠিক দিকে এক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।
কী ঘটেছিল ১৯৯৫ সালের নভেম্বরের সেই সাক্ষাৎকারের আগে?
আর্ল স্পেন্সার ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভিকে একটি চিঠি দিয়েছেন - যা দি ডেইলি মেইল সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে তিনি বলেন, বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বশির প্রিন্সেস ডায়ানাকে কিছু জাল ব্যাংক এ্যাকাউন্টের হিসাব দেখিয়েছিলেন ।
এতে দেখা যায়, রাজপ্রাসাদের দু'জন উর্ধতন কর্মচারী প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যাপারে তথ্য দেবার বিনিময়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছিলেন।
আর্ল স্পেন্সার বলেন, "আমি যদি ওই দলিলগুলো না দেখতাম তাহলে আমি আমার বোনের সাথে বশিরের পরিচয় করিয়ে দিতাম না।"
ডেইলি মেইলে দেয়া আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানের রিপোর্টার বশির তার সাথে কথা বলার সময় রাজপরিবারের উর্ধতন সদস্যদের ব্যাপারে মিথ্যা ও মানহানিকর বেশ কিছু উক্তি করেন।
তার মতে, এর লক্ষ্য ছিল তার আস্থা অর্জন করা ও তার বোনের কাছে পৌঁছাতে পারা ।
বশিরের এসব দাবির মধ্যে ছিল : ডায়ানার ব্যক্তিগত চিঠিপত্র খুলে দেখা হচ্ছে, তার দেহরক্ষী তার এবং তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং তার ব্যাপারে নানা গল্প সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দিচ্ছে। আরো বলা হয়, ডায়ানার গাড়িকেও অনুসরণ করা হচ্ছে এবং তার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে।
মেইল সংবাদপত্র এসব দাবিকে সর্বৈব মিথ্যা বলে অভিহিত করে।
এই প্যানোরামা অনুষ্ঠানের জন্যই ১৯৯৫ সালে তিনি প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন - যাতে ডায়ানা নিজেই একটি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেন, এবং তার স্বামী প্রিন্স চার্লসের সাথে কামিলা পার্কার-বোলসের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। কামিলা পার্কার-বোলস এখন ডাচেস অব কর্নওয়াল।
এই সাক্ষাৎকারেই ডায়ানা সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন, "এ বিয়েতে আমরা লোক ছিলাম তিনজন।" তখন ডায়ানা ও চার্লস আলাদা থাকেন, কিন্তু তাদের আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি।
সারা পৃথিবীতে ২ কোটি ৩০ লাখ লোক টিভিতে ওই সাক্ষাৎকারটি দেখেছিলেন।
এর পর ২০০৪ সালে মার্টিন বশির বিবিসি ছেড়ে আইটিভিতে যোগ দেন। এর পর কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি ও এমএসএনবিসিতে। ২০১৩ সালে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সারা প্যালিনকে ''বিশ্বমানের নির্বোধ'' বলার পর দুঃখপ্রকাশ করে তিনি এমএসএনবিসি থেকে পদত্যাগ করেন।
এর পর ২০১৬ সালে আবার বিবিসি নিউজে যোগ দেন বশির এবং সেখানে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন।
তার বয়স এখন ৫৭ এবং তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার পরবর্তী জটিলতায় গুরুতর অসুস্থ। তার হৃৎপিন্ডেও একটি অপারেশন হয়েছে। অসুস্থতার কারণে তিনি আর্ল স্পেন্সারের অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারেননি।
ডায়ানার একটি চিঠি
জানা যায়, মার্টিন বশিরের ওই ''সাক্ষাৎকারটি যেভাবে নেয়া হয়েছে তাতে তিনি সন্তুষ্ট'' এমন কথা লিখে প্রিন্সেস ডায়ানা ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে একটি নোট পাঠিয়েছিলেন।
তবে সেই হাতে-লেখা নোটটি হারিয়ে গিয়েছিল বলে এত দিন জানা ছিল।
কিন্তু গত সপ্তাহে বিবিসি জানায়, ডায়ানার নিজের হাতে লেখা সেই আসল নোটটি পাওয়া ড়েছে।
বিবিসি আরো জানিয়েছে যে এই নোটটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিবিসি ইতোমধ্যেই ভুয়া ব্যাংক দলিলপত্রের জন দুঃখ প্রকাশ করেছে তবে এটাও বলেছে যে প্রিন্সেস ডায়ানা ওই নোটে বলেছেন যে তিনি ভুয়া দলিলগুলো দেখেননি এবং সাক্ষাতকার দেবার ক্ষেত্রে সেগুলো কোনো ভূমিকা রাখেনি।
তবে বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মণ্ড বলছেন, প্রিন্সেস ডায়ানার সেই নোটটি কীভাবে পাওয়া গেল তা বিবিসি বলেনি, তবে এটি হয়তো বিবিসির আত্মপক্ষ সমর্থনে সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু আর্ল স্পেন্সারের যেটি মূল অভিযোগ, তা হলো : মার্টিন বশির তার আস্থা অর্জন করে ডায়ানার সাক্ষাৎকার পাবার জন্য তাকে বহু মিথ্যা বলেছিলেন - যার মাত্র একটি অংশ হচ্ছে ব্যাংকের জাল দলিলগুলো। তবে সাংবাদিকতার এই গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগের ব্যাপারে ডায়ানার নোটে কিছু বলা নেই - বলছেন জনি ডায়মণ্ড।
জনি ডায়মণ্ড আরো বলছেন, তাছাড়া ১৯৯৬ সালে এ ব্যাপারে বিবিসি কী জানত - সে প্রশ্নের মীমাংসাও এতে হচ্ছে না।
সূত্র : বিবিসি