মিয়ানমারের অবস্থান ও ভূকৌশলগত গুরুত্ব

মো: বজলুর রশীদ | Nov 19, 2020 05:51 pm
মিয়ানমারের অবস্থান ও ভূকৌশলগত গুরুত্ব

মিয়ানমারের অবস্থান ও ভূকৌশলগত গুরুত্ব - ছবি সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার ভারত সফর করেছেন। এসপার সফর শেষে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। সফরটি চীনসহ বিশ্বকে তোলপাড় করেছে, গুরুত্বের কারণে। কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেন, এ সফরে ভারতের নিরাপত্তা, সমরকৌশল ও আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে একটি বলয় তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘কোয়াড’কে কার্যকর এবং কোনো সামরিক মোর্চা তৈরির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। ভারত ও চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনার মতোই শক্তিশালী।

এমন উত্তপ্ত সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান মনোজ বিক্রম নারাভানে ও বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মিয়ানমার সফর করেন পম্পেও-এসপার ভারতে পৌঁছার কিছু আগে। এ সফরটি অনেকটা অখ্যাত থেকে যায় আগের সফরের ডামাডোলের কারণে। লাদাখে ভারত যখন চীনের সাথে মোকাবেলায় ব্যস্ত তখন মিয়ানমার এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে দৃষ্টি রাখা উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন হয়ে উঠেছে।

ভারতের উত্তর-পূর্ব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে বহু আগে থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ বিদ্রোহীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি। বিদ্রোহী দলগুলো মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় চীনের ইউনান প্রদেশের সাথে সংযুক্ত। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যার বিস্তৃতির পর মিয়ানমার চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এভাবে চীন-মিয়ানমার সীমান্ত সশস্ত্র বিদ্রোহী বিছিন্নতাবাদী গ্রুপের আখড়ায় পরিণত হয়। ভারতের আসামের ‘উলফা’ ও নাগাল্যান্ডের বিদ্রোহী দলগুলো চীনের ইউনানেও ঢুকে পড়ে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ইউনান প্রদেশ মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও লাওসের সীমান্তের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে রয়েছে একট ভিন্ন মাত্রা। নতুন বর্ষে পানি খেলার বিষয়টি ইউনান ছাড়াও থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও লাওসে বহুল প্রচলিত। ইউনানের লোকজন মনে করে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প তাদের জীবনধারার উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও চীনের ইউনানের মধ্যে অনেক বিষয়ের মিল; যেমন খাবার, সামাজিক অনুষ্ঠান, নির্মাণশৈলী, পোশাক। চীনের এ অঞ্চলটির আসিয়ান দেশের সাথে মিল রয়েছে অনেক কিছুতে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ইউনান যেন স্বর্গ। ভারতের অভিযোগ, সেখানে ওরা প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র পেয়ে থাকে। মিয়ানমারে ২৬টি নৃতাত্ত্বিক বিচ্ছিন্নতাবাদী দল সংগ্রামরত। কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির ১৫ হাজারের ওপর শক্তিশালী প্রশিক্ষিত সেনা রয়েছে, যারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সামনাসামনি যুদ্ধ করতে পারঙ্গম। ইউনাইটেড স্টেট আর্মির ২৫ হাজার সেনা রয়েছে; তারাও মিয়ানমার সেনাদের সাথে যুদ্ধরত। এটা আজকের কোনো কাহিনী নয়। অনেক দশক ধরে চলছে। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী ও আতঙ্কবাদীরা মিয়ানমারের প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে কাজ করতে সক্ষম। মিয়ানমারের সরকারবিরোধী জনগণও এসব বিদ্রোহীকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে এবং তথ্যবিনিময় করে। চীন রাজনৈতিক কারণে ভারত ও মিয়ানমারকে চাপে রাখার জন্য এ দলগুলোকে সহায়তা করে মর্মে উভয় দেশ অভিযোগ করে আসছে। চীন কাজের সুবিধার জন্য এসব দলের সাথে সংযোগ রক্ষা করে এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি দেখার জন্য একজন পদস্থ ‘অ্যামবেসেডর’ ও লিয়াজোঁ অফিস রয়েছে বলে ভারতের অভিযোগ। মিয়ানমারের নতুন সংবিধান রচনা করার কাজে এই অফিসও সহায়তা করে থাকে বলে মিয়ানমার সূত্রে প্রকাশ। চীন মিয়ানমারের উন্নয়নের জন্য হেন কোনো সেক্টর নেই যেখানে সহায়তা করছে না।

এ সুবাদে চীন মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথেও জড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের বন্দর, বাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ, দামি পাথর সংগ্রহে খনির কাজ এবং খনিজ সম্পদ আহরণে চীন আর্থিক সহায়তা এবং বেইজিংয়ের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত দক্ষ ঠিকাদাররা কাজ করে থাকে। সহায়তাকারী চীনের বিরুদ্ধে মিয়ানমার কোনো আওয়াজ তোলেনি। সম্প্রতি কালাদান করিডোর রোড প্রজেক্টে কর্মরত পাঁচজন ভারতীয় প্রকৌশলীকে আরাকান আর্মির সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। কালাদান করিডোর ভারতের মিজোরাম ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দুর্গম স্টেটকে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের সিত্তুয়ে বন্দরের সাথে সংযুক্ত করছে। (এটা চীনের জন্য বড় দুসংবাদ, চীন যেন দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষেছে। ওই বন্দরে চীন নৌঘাঁটি করার চূড়ান্ত উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকাও ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনীর আধিপত্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে আলাপ চালাচ্ছে। এমন সময়ে কালাদান করিডোরকে চীন সহজভাবে নিচ্ছে না।) সিত্তুয়ে বন্দর কলকাতার মালামাল পরিবহনের জন্য সুবিধাজনক। বন্দরটি ভারতীয় সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

সম্প্রতি রাশিয়া সফরে মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লিং রাশিয়ান স্টেট টিভির শোতে বলেন, এক বড় শক্তি আরাকান বাহিনীকে সহায়তা করছে। আরাকান বাহিনী যে অস্ত্র ব্যবহার করছে সেগুলো চীনের তৈরি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এরা গোপনে তৎপরতা চালায়। এখানে রোহিঙ্গারাও রয়েছে মর্মে মিয়ানমার অভিযোগ করেছে। বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের সমুদ্রপাড়ে ভারত আস্তানা গাড়ছে। ভারতের ONGC তেল এলাকা অনুসন্ধান সমীক্ষা চালাচ্ছে। সিত্তুয়ে বন্দরেও ভারত রয়েছে। এটিও বঙ্গোপসাগরের তীরে। মিজোরামের পণ্যবহন এবং বঙ্গোপসাগর দিয়ে কলকাতা বন্দরের সাথে যোগাযোগ- এসবই প্রয়োজন ভারতের।

চীন ৭.২ বিলিয়ন ব্যয় করে বঙ্গোপসাগরের কিউকপিউ বন্দরে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন এবং ইউনান প্রদেশের সাথে একে সংযুক্ত করতে চায়। ভারতের তৈরি করা সিত্তুয়ে বন্দর ও কিউকপিউ বন্দর বেশ কাছাকাছি। কিউকপিউ বন্দর কি শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের মতো ঋণের ফাঁদে জড়াবে? মিয়ানমার যদি চীনাদের কৌশলে ভীত হয় তা হলে তারা কি কোয়াডের দলে ভিড়বে? এমনি এক জটিল আবর্তে মিয়ানমার ধুঁকছে। এগুলোর সাথে সংযুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গাদের সাথে যে বর্বরতা দেখানো হয়েছে, সেটি। ভারত ছাড়া সবাই এর বিরোধিতা করেছে, রোহিঙ্গাদের সাথে অসৎ আচরণ সু চির খেতাব কেড়ে নিয়েছে এবং তাকে অপদস্থ হতে হয়েছে। মিয়ানমার মনে করে, ভারতের কোলেই শান্তি! তা হলে কি মিয়ানমার কৌশলগত অবস্থা পরিবর্তন করবে?

মিয়ানমারের অবস্থান এমন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে সম্পর্ক রয়েছে অন্যান্য আসিয়ান দেশের সাথেও গভীরভাবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর একটি হলো মিয়ানমার। ‘কোয়াড’ আসিয়ান বা দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের জন্য বহু দিন ধরে হা করে বসে আছে। মিয়ানমারকে দলে ভেড়াতে ভারত বহুদিন ধরে বেসরকারি কোম্পানিকে সংগঠিত করার প্রয়াস নিয়েছে। মিয়ানমারের সাথে সামরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে ভারতের বহু কিছু ছাড় দেয়ার রয়েছে। ভারত মিয়ানমারে ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কৃষি গবেষণার ওপর ইনস্টিটিউট বানিয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বিকাশে কিলো ক্লাস সাবমেরিন ও টর্পেডো প্রাথমিক প্রয়োজন। সেটি ভারত তাকে দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এসব ছাড়াও ১০৫ মিমি আর্টিলারি গান, রাডার ও শব্দ তরঙ্গের উপকরণ দেয়া হবে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক প্রাইভেট কোম্পানি কাজ করছে, মিয়ানমারে তা নেই। ভারত মিয়ানমারে এই দায়িত্ব পালন করার বিষয় এখন পরিস্ফুট হচ্ছে। ভারতের দূতাবাস এবং মিশন ও মিশনের শাখা-প্রশাখাগুলো মিয়ানমারে ভারতের হয়ে ‘প্রাইভেট সেক্টরে’ কাজ করছে।

মিয়ানমার চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপকে অস্ত্র সহায়তা না দিতে। ফলে ভারতের জন্য এটি একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইকোনমিক করিডোর নিয়েও মিয়ানমার খুবই সতর্কতার সাথে এগোচ্ছে। এটাও ভারতের জন্য সুখের বিষয়। চীনা অর্থায়নে করিডোরটি চীনের কুনমিং থেকে শুরু হয়ে মিয়ানমারের মান্দালে এসে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ইয়াঙ্গুনে শেষ হবে অপরটি কিউকপিয়ায় যাবে। দু’টিই সমুদ্রবন্দর। উ সেট অং যিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার, বলেছেন, চীনের ঋণের ফাঁদে যেন মিয়ানমার পা না দেয়। তিনি আরো বলেন, এসব প্রকল্পের একটি বাণিজ্যিক দিক থাকবে, যা মিয়ানমারের অবশ্যই উপকারে আসবে। মিয়ানমার এখনো অস্ত্র ও হার্ডওয়্যার চীন থেকে সংগ্রহ করে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেছে, যেমন- রাশিয়া, ভারত, ইসরাইল, ইউক্রেন ও পাকিস্তান। মিয়ানমার ও রাশিয়া সামরিক চুক্তিও সম্পাদন করেছে। ভারত থেকে মিয়ানমার নৌবাহিনীর জন্য প্রথম কিলো ক্লাস সাবমেরিনও সংগ্রহ করেছে। মিয়ানমারের অভিযোগ, চীন বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে থাকে। বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি, টাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও আরাকান আর্মি। বিগত দশকে টডঝঅ বিভিন্ন সংগ্রামী জোটকে বিভিন্ন ধরনের অ্যামুনুশন বিক্রি করেছে। গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লিয়াং চীনা সেনা কর্মকর্তাদের চীন নির্মিত অস্ত্রের ফটো দেখান। ২৩ জুন থাই সেনাবাহিনীর টহল দল থাইল্যান্ডের মি সট সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ চীনা অস্ত্র জব্দ করে। চীনের সাথে সমুদ্রে যৌথ মহড়া চালাতে মিন অং অপারগতা প্রকাশ এবং সাবমেরিন দেয়ার চীনা প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন।

অক্টোবরে মিন অং রাশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে সামরিক ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছেন। এর আগে মে মাসে মিয়ানমার সরকার ভারতের হাতে ২২ জন আসামি ও ‘মেইতি’ বিদ্রোহীকে তুলে দিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড ভারত-মিয়ানমার সম্পর্কে ‘সিমেন্ট ঢেলেছে’। ভারত অভিযোগ করেছে, চীন আসামের ও নাগা বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে। চীনের সাথে সম্ভাব্য কোনো যুদ্ধে মিয়ানমার ভারতের পক্ষে অংশ না নিয়ে নিরপেক্ষ থাকলেও ভারতের জন্য তা সুখকর; অন্যথায় পাকিস্তান ও চীন সীমান্তের সাথে মিয়ানমার সীমান্তও সামাল দেয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে ভারতের পক্ষে। তবে ইদানীং ভারতের সেনাধাক্ষ্যরা তিনটি ফ্রন্টে যুদ্ধের কথা বলছেন না।

মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটকে অনেক ‘রির্সোসফুল’ স্টেট বলা হয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এটি খুবই হানাহানি ও বিভেদের। সেনাবাহিনীর অত্যাচারের ফলে সেখানে নৃতাত্ত্বিক বিরোধ দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের হলো- এসব হানাহানি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। মিয়ানমার কেন রাখাইনে আক্রমণ চালায় রাখাইন মুসলমান ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের ওপর? সমালোচকরা এখন বলছেন, এর অনেক কারণের মধ্যে প্রথম হলো ভূমি দখল করা রাষ্ট্র ও বহুজাতিক করপোরেট স্টেকহোল্ডারদের জন্য। বলা হচ্ছে- স্থানটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। পড়শি দেশগুলো বিশেষ করে চীন ও ভারত রাখাইন স্টেটে পুঁজি বিনিয়োগ করতে চেয়েছে। উভয় দেশ বিবাদ সত্ত্বেও রাখাইনে, মংডু ও আকিয়াবের বিস্তীর্ণ উর্বর এলাকায় বিশালাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওখানে ‘ইপিজেড’ মানের অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। চীন পছন্দ করে কিউকপিউ আর ভারত সিত্তুয়ে। সিত্তুয়ে বন্দর এলাকা নির্মাণ বিষয়ে ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। চীন ও ভারতের সাথে বাণিজ্যিক রুট সম্প্রসারণ, বন্দরকে সামরিক কাজে ব্যবহার যাতে বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তারে সহায়ক হতে পারে, সে জন্য মিয়ানমার যেন পাগলপারা, এ জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বার্থের বলি হতে হয়েছে।

মিয়ানমার দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাঝে। ফলে এ দেশের গুরুত্ব বেড়েছে আরো বেশি। রাখাইন কোস্টাল এলাকা বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ওই পয়েন্ট বাণিজ্য নেটওয়ার্ক ও মিলিটারি পয়েন্ট হিসেবে পাকিস্তান, আমিরাত, ইরাক, ইরান, সৌদি আরবের সাথে কাজ করতে পারবে। চীন ও ভারত মহাসাগরে আধিপত্যের জন্য রাখাইন পয়েন্টটি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।

মিয়ানমার নিজের অবস্থান নিয়ে সতর্ক রয়েছে। সে চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সাথে সুসম্পর্ক রাখছে, আবার সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের সাথেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। জাপান, চীন ও ভারত ভালোভাবেই জানে, মিয়ানমারের কৌশলগত গুরুত্ব কত বেশি। রাশিয়াও মিয়ানমারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছে। জাতিসঙ্ঘের স্থায়ী দু’টি সদস্য রাষ্ট্র চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের বন্ধু। রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ ঝড়ঝাপটায় আক্রান্ত মিয়ানমার প্রয়োজনের সময় তাদের কাছ থেকে বিপদে সহায়তা পেয়েছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us