করোনার ছোবল, কাঁপছে দিল্লি
করোনার ছোবল, কাঁপছে দিল্লি - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের রাজধানী তৃতীয় ও আরো ভয়াবহ কোভিড-১৯ মহামারির কবলে পড়েছে।
শত শত চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্যাল সদস্যকে রাজধানীতে নিয়ে আসা হচ্ছে, হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হচ্ছে, চিকিৎসা দলগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ চালাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
দিল্লিতে গত সোমবার ৩,৭৯৭ জন নতুন রোগী পাওয়া যায়। এটি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক। অথচ অক্টোবরের শুরুতে দিনে নতুন শনাক্ত হতো দুই হাজারের কম।
অবশ্য গত সপ্তাহে সাত হাজার নতুন সংক্রমণ থেকে সংখ্যাটি কমে এসেছে। তবে কমার অন্যতম কারণ পরীক্ষা কম হওয়া। ছুটি বাড়ার কারণে গত তিন দিনেই পরীক্ষা কম করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে ভারতে গত সোমবার চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম সংক্রমণ পাওয়া গেছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৯,১৬৩।
ভারতে এলাকাভেদে করোনার প্রকোপে তারতম্য নিয়ে ইপিডেমিওলোজিস্ট শহিদ জামিল বলেন, দেশটির বিশাল আকার ও জনসংখ্যার কারণে এমনটি হচ্ছে। তিনি বলেন, সময় ও এলাকাভেদে করোনাভাইরাসের তারতম্য অব্যাহতই থাকবে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে পর্যায়ক্রমে ৭৫ জন চিকিৎসক ও ২৫০ জন প্যারাডেমিক নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার থেকে চিকিৎসকেরা কাজে যোগদান করছেন।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার দিল্লির রাজ্য সরকার বিয়ে অনুষ্ঠানে ২০০ লোক সমবেত হওয়ার নিয়ম বদলিয়ে ৫০ করেছে। তাছাড়া সামাজিক দূরত্ব পালন না করায় মার্কেটগুলো বন্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা যেসব মার্কেটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় না, সেগুলো বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা অনুমতি চেয়েছি।
এক কোটি ৯৮ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দিল্লিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৮৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ৭,৭১৩।
বিশেষজ্ঞর এর জন্য কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।
দিল্লিতে বিভিন্ন ধরনের লোকজনের মধ্যে মেলামেশা হয় অনেক বেশি। নানা ধর্মীয় উৎসবও হয়ে থাকে। আর এসব উৎসব যত বেশি হবে, মার্কেটগুলোতে ভিড় তত বেশি হবে। পরিণতিতে রোগটির বিস্তারও ঘটবে।
আকেরটি কারণ হলো, দিল্লি হলো বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরী। প্রতি শীতেই আশপাশের রাজ্যের কৃষেকরা জমি পরিষ্কার করার জন্য আগুন দেয়। এর ধোয়া আসে দিল্লিতে। তাছাড়া যানবাহন ও কলকারখানা থেকেও দূষণ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দূষণ আর কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
আবার কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতাও কম দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মাস্ক পরার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করছে। তাছাড়া গণপরিবহন ব্যবহার, কেনাকাটা, সামাজিক মেলামেশা থেকেও করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে।
ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের প্রধান ডা. বিবেচক নানগিয়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলো এর মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যপরিচর্যায় নিয়োজিত লোকজন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এখন অনেক কম বয়স্ক, বিশেষ করে ৩০ ও ৪০-এর কোঠার রোগী আসছে। আগে আসত নানা রোগে জর্জরিত বয়স্করা। এর কারণ হলো, তরুণরা ঘোরাফেরা করে বেশি। আমরা চলাচল সীমিত করার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, আমাদেরকে সেলফ লকডাউন অনুসরণ করতে হবে।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন মনে করেন, কোভিড-১৯-এর তৃতীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ বিন্দু শেষ হয়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দুই সপ্তাহে অবস্থা এমনই থাকবে।
সূত্র : স্ট্র্যাইটস টাইমস