ব্রাহ্মস মিসাইল রফতানি ঝুঁকিপূর্ণ?
ব্রাহ্মস মিসাইল রফতানি ঝুঁকিপূর্ণ? - ছবি সংগৃহীত
ভারতের রাশিয়ান দূতাবাসের ডেপুটি প্রধান রোমান বাবুশকিন গত সপ্তাহে বলেছেন, ভারতের সাথে মিলে তার দেশ যে ব্রাহ্মস সুপারসনিক মিসাইল তৈরি করেছে, সেটা তারা ফিলিপাইনের কাছে বিক্রি করতে আগ্রহী।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিন্টের ভাষ্যমতে, তিনি বলেছেন, ব্রাহ্মস তৈরির পর থেকে সবগুলো পরীক্ষা সফলভাবে উৎরে গেছে। এর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই তৃতীয় পক্ষের কাছে এটা রফতানি করা হবে, যেখানে প্রথম দেশ হলো ফিলিপাইন্স।
বাবুশকিন গত বছর যে নীতি ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেখানেই এই খেলা বদলে দেয়া মিসাইল রফতানির পরিকল্পনার বিষয়টি ছিল। লেখক এমনকি ২০১৯ সালের আগস্টে এক বিশ্লেষণে বলেছিলেন যে, রাশিয়া হয়তো ব্রাহ্মস মিসাইলকে ব্যবহার করে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করতে পারে। সামরিক বিক্রয় এবং সামরিক কূটনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের সার্বভৌম অধিকার অবশ্যই মস্কোর রয়েছে। তবে এখানে বিশেষভাবে ঝুঁকি রয়েছে, কারণ এখানে চীন জড়িত।
রাশিয়া চীনের বিপরীতে ধীরে ধীরে ভারতের দিকে ঝুঁকছে, সেপ্টম্বরেই এমন যুক্তি দিয়েছিলেন লেখক। বিজেপির প্রভাবশালী নেতা সুব্রামানিয়ান স্বামী রাশিয়ার সাথে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে কড়া সমালোচনা করার পর চলতি মাসেই শুরুর দিকে এর জবাব দিয়েছেন লেখক। তিনি লিখেছেন, “রাশিয়া-ভারত সম্পর্ককে বিনষ্ট করার সুযোগ কোন কট্টর মার্কিনপন্থী বিজেপি আদর্শধারীকে দেয়া উচিত নয়”।
বিশেষ করে চীনের পাশাপাশি ভারতের সাথে সম্পর্ককে রাশিয়া কৌশলগত দিক থেকে কতটা গুরুত্ব দেয়, সেটা এখানে বোঝা গেছে। সেই অবস্থান থেকেই বাবুশকিন ভারতের সাথে যৌথভাবে উৎপাদিত ব্রাহ্মস ফিলিপাইন্সের কাছে রফতানির কথা বলেছেন, যাদের সাথে চীনের আঞ্চলিক বিবাদ রয়েছে। এবং যে কোন সম্ভাব্য সামরিক সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে একমাত্র চীনের বিরুদ্ধেই ওই মিসাইলগুলো ব্যবহার করবে ফিলিপাইন্স।
অন্যভাবে বললে রাশিয়া হয়তো চীনকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা ভারসাম্য রক্ষার জন্য তারা ভারতের সাথে অংশীদারিত্ব করছে। এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে রাশিয়া-আমেরিকান পুনঃমৈত্রিও হতে পারে, যেটা কোয়াডের সহায়ক শক্তি হিসেবে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু লেখক অন্যত্র উল্লেখ করেছেন যে, সম্প্রতি যে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চুক্তি হয়েছে, সেটা কোয়াডের চীন বিরোধী শক্তিকে শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু এখন ওই অঞ্চলে ব্রাহ্মস বিক্রির জন্য রাশিয়ার প্রচেষ্টায় হিসেব নিকেষ বদলে যেতে পারে।
এখানে পরিস্কারভাবে বলা দরকার যে, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো চীনকে সরাসরি আগ্রাসীভাবে নিয়ন্ত্রণের কোন ইচ্ছা রাশিয়ার নেই। তবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারসাম্য রক্ষার নামে পরোক্ষভাবে রাশিয়া যেটা করতে চাচ্ছে, সেটা ভারত-যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করবে।
একই সাথে রাশিয়া চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যও সম্ভাব্য সবকিছু করে যাচ্ছে। দুই বড় পরাশক্তি ঘনিষ্ঠ সামরিক অংশীদার, এবং মস্কো এমনকি বেইজিংকে মিসাইল অ্যাটাক সতর্কতা সিস্টেম তৈরিতেও সাহায্য করছে। এই প্রযুক্তি কেবল রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আরও যৌথ প্রকল্প ও কৌশলগত লেনদেন তো রয়েছেই। রাশিয়া দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় ব্রাহ্মস মিসাইল বিক্রি করলেও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের কোনই ঝুঁকি নেই। চীন কোনভাবেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোন ক্ষতি হতে দেবে না, এটা নিশ্চিত হয়েই রফতানির কথা ভাবছে রাশিয়া।
তবে এই পদক্ষেপের ঝুঁকির দিকটিও বিবেচনা করা দরকার। চীন হয়তো সরাসরি কোন পদক্ষেপ নেবে না, বা কিছু বলবে না, কিন্তু মিসাইল বিক্রি করা হলে সেটা তাদের নজরে থাকবে এবং দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের জন্য এই পদক্ষেপকে অবন্ধুসুলভ বিবেচনা করতে পারে তারা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে চীন এটাকে রাশিয়া-ভারতের সামরিক সম্পর্কের একটা সম্প্রসারণ হিসেবে দেখতে পারে, যেটা রাশিয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে সন্দেহের জন্ম দিতে পারে এবং এর কারণে একটা নিরাপত্তা ঝঞ্ঝাট তৈরি হতে পারে।
সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন