অরুনাচলে ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুতি চীনের!
অরুনাচলে ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুতি চীনের! - ছবি : সংগৃহীত
চীন তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের (টিএআর) নিয়াঙ্গচির সাথে সিচুয়ানের ইয়ানকে যুক্তকারী একটি কৌশলগত রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু করতে যাচ্ছে।
সিচুয়ানের রাজধানী চেঙ্গুদুর সাথে তিব্বতের রাজধানী লাসাকে যুক্ত করার বৃহত্তর একটি রেল প্রকল্পে অংশ এই ইয়ান-নিয়াঙ্গচি রেললাইন হবে এই প্রকল্পের মধ্যভাগ। ১,০১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশটি হবে তিনটি ভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
অন্যদিকে সিচুয়ান প্রদেশের মধ্যে থাকা প্রকল্পের চেঙ্গদু-ইয়ান অংশের কাজ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে। লাসা-নিয়াঙ্গচি অংশের কাজ শেষ হবে ২০২১ সালে। ইয়ান-নিয়াঙ্গচি অংশের কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালে।
চীন সরকারের জন্য সালে। ইয়ান-নিয়াঙ্গচি অংশের কাজ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি এই প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রেলওয়ে লাইনটি তিব্বতের সুশাসনে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চীনের জাতীয় ঐক্য ও সীমান্ত এলাকার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিব্বতগামী ও তিব্বতের ভেতরে সড়ক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে চীন। ট্রেনের মতো গণপরিবহনের মাধ্যমে স্থলপথে কানেকটিভিটি বাণিজ্য ও পর্যটন দিয়ে তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের ওপর চীনের সামরিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতেও সহায়ক হচ্ছে, সেখানে বিপুল সংখ্যায় দ্রুত মোতায়েনের সুযোগও সৃষ্টি করছে।
কিংঘাইয়ের সাথে লাসাকে সংযুক্তকারী একটি রেললাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। কিংঘাই ইতোমধ্যেই চীনের বাকি অংশের সাথে রেললাইনের মাধ্যমে যুক্ত হওয়ায় গোলমুদ-লাসা রেললাইন হবে চীনের বিশাল রেলনেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে তিব্বত।
সিঙগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেঙ গ্লোবাল টাইমসকে সম্প্রতি বলেছেন যে নিয়াঙ্গচিগামী রেলওয়ের ফলে যেকোনো সঙ্কটকালে চীন তার কৌশলগত সামগ্রী ভারত-চীন সীমান্তে আরো সহজে পাঠাতে পারবে।
নিয়াঙ্গচি পর্যন্ত রেললাইন পৌঁছে যাওয়ার ফলে পিপলস লিবারেশন আর্মি দ্রুততার সাথে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম ভারত সীমান্তের অরুচনাচল প্রদেশ পর্যন্ত পাঠাতে পারবে।
যদিও লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) ভারত ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা পশ্চিম সেক্টরে সীমাবদ্ধ, অদূর ভবিষ্যতে অরুনাচল প্রদেশেও তা ছড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না। চীন অরুনাচল প্রদেশের প্রায় ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি করছে। এই প্রেক্ষাপটে বিরোধপূর্ণ সীমান্তের কাছে চীনের অবকাঠামো নির্মাণ ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে।
চীন তিব্বতজুড়ে মহাসড়কের নেটওয়ার্কও নির্মাণ করছে। লাসাকে নিয়াঙ্গচির সাথে যুক্ত করতে ৫.৮ বিলিয়ন ডলারে ৪০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে এই দুই নগরীর মধ্যে ভ্রমণ সময় আট ঘণ্টা থেকে কমে পাঁচ ঘণ্টায় কমে যাবে।
অরুনাচল প্রদেশের কাছে থাকা বিমানবন্দরগুলোর দ্বৈত ব্যবহারও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অরুনাচল প্রদেশ থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাম্বদু বাঙ্গদা বিমানবন্দরটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
অবশ্য ভারতও অরুনাচল প্রদেশে এলএসিজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণকাজ চালাচ্ছে। কিন্তু তা কোনোভাবেই চীনের সাথে তুলনীয় হচ্ছে না। তাছাড়া ভারত প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা বাস্তবায়নে অনেক বেশি সময় লাগিয়ে ফেলে। ভারতের রেলপ্রতিমন্ত্রী একবার বলেছেন, জরিপ সম্পন্ন হওয়ার পর ভালুকপং-টেঙ্গা-তাওয়াঙ লাইন নির্মাণকাজ শেষ করতে লাগবে আরো ৬-৭ বছর।
ভারতীয় অবকাঠামো প্রকল্পগুলো খুব কমই সময়মতো শেষ হয়। অরুনাচল প্রদেশের এলএসিতে ভারতীয় রেললাইন যেতে অন্তত এক দশক তো লাগবেই।
সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট