হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়া : কেন হয়, কী করবেন
হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়া : কেন হয়, কী করবেন - ছবি সংগৃহীত
অনন্যার বয়স ২৫ বছর। প্রতিদিনের মতো গতকালও সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে আয়নার সামনে ব্রাশ করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করলেন তার ঠোঁট দুটো কেমন যেন বেঁকে গেছে। আগের রাতেও সবকিছু স্বাভাবিক ছিল, কোথাও কোনো আঘাত পেয়েছে বলেও মনে পড়ছে না। অনুভব করল বাম পাশটা কিছুটা অবশ তবে কোনো ব্যথা নেই। লোপা ভাবল হয়তো তন্দ্রাভাব থাকায় এমনটি মনে হচ্ছে অথবা আয়নায় সমস্যা। এ দিক-ও দিক দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না এটা তার শারীরিক সমস্যাই।
আসলেই তাই, এটা এক ধরনের স্নায়ুবিক সমস্যা বা স্নায়ুরোগ যা ফেসিয়াল পলসি নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে একে বেলস পলসিও বলা হয়- যখন বেলস সাইন পজিটিভ থাকে। আমাদের শরীরে মোট ১২ জোড়া করোটিকা স্নায়ু থাকে যার ৭ নম্বর স্নায়ু জোড়ার নাম ফেসিয়াল নার্ভ এবং এ নার্ভ বা স্নায়ুটির প্যারালাইসিস হলে বলা হয় ফেসিয়াল পলসি।
কারণ
এ রোগের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হয় ভাইরাস বা আঘাত হতে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
লক্ষণ
ষ ঠোঁট দুটো বিপরীত দিকে বেঁকে যায়।
ষ আক্রান্ত অংশের চোখ পুরোপুরি বন্ধ হয় না, কিছুটা বা পুরোটাই খোলা থাকে।
ষ পানি খাওয়ার সময় আক্রান্ত অংশের ঠোঁটের কোণা দিয়ে পানি পড়ে যায়।
ষ শিষ দিতে পারে না।
ষ মুখ ফুলালে বাতাস বেরিয়ে যায় এবং আক্রান্ত অংশ ফুলে না।
ষ আক্রান্ত অংশে অনুভূতি কমে যায়।
ষ জিহ্বার সামনের অংশে স্বাদ কমে যেতে পারে।
চিকিৎসা
এ ব্যাপারে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা: আবু সাঈদ বলেন, এ ধরনের রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যেতে পারে। সাধারণত তিন মাস সময় লাগে সারতে। কখনো তা না সেরে জটিল হয়ে যেতে পারে এবং চিরস্থায়ী হতে পারে। তাই বিন্দুমাত্র অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। শুধু ওষুধে এ রোগ সারে না। পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি এবং নির্দিষ্ট ব্যায়াম অত্যাবশ্যকীয়। চিকিৎসকগণ রোগের সঠিক ইতিহাস জেনে এবং শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করার পর প্রয়োজনীয় সঠিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল জাতীয় ওষুধ এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বয়সভেদে নির্দিষ্ট মাত্রায় দেয়া হয়। নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চিকিৎসা নির্ভর করে কত দ্রুত অভিজ্ঞ ও সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন তার ওপর। দেরি করে এলে এ জাতীয় ওষুধের কোনো কার্যকারিতা থাকে না। আইআরআর মুখের যে অংশের সমস্যা তাতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ দেয়া হয়। কুসুম গরমপানিতে কাপড় ভিজিয়ে সেঁক দেয়া যায়।
তিন সপ্তাহ পরে ইএসটি দেয়া হয়। মুখের মাংসপেশির নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। স্ট্র বা পাইপ দিয়ে পানি খেতে পরামর্শ দেয়া হয় যাতে মুখের মাংসপেশির শক্তি বাড়ে। চুইংগাম চিবিয়ে ব্যায়াম করতে বলা হয়। চোখ বন্ধ করতে না পারলে দিনের বেলা সানগ্লাস এবং রাতে আইপ্যাড ব্যবহার করতে পরামর্শ দেয়া হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা যেকোনো রোগের জটিলতা কমায়। এ রোগ আপনা থেকে সেরে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই চিরস্থায়ী হতে পারে। সে জন্য আইটি কার্ভ বা এসডি কার্ভ করে জেনে নেয়া যায় এ রোগের অগ্রগতি।