সমুদ্রপথে ভারতকে ভাতে মারার কৌশল চীনের!
সমুদ্রপথে ভারতকে ভাতে মারার কৌশল চীনের! - ছবি : সংগৃহীত
পূর্ব লাদাখে একের পর এ বৈঠক হলেও স্থলসীমান্তে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে নড়ার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না চীন। মাঝে মাঝেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হতে যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত বাস্তব কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যাচ্ছে না। সাগরে ভারত যাতে সুবিধা না করতে পারে, সে জন্যও একই ভাবে সক্রিয় বেইজিং। এই প্রেক্ষাপটে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) চীনের মোকাবিলার পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরের আধিপত্য নিয়েও এখন সক্রিয় হতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। কারণ শুধু কৌশলগতই নয়, এই অঞ্চলে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে অনেকটাই। ভারতীয় কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অস্ত্রের দাপটের পাশাপাশি সমুদ্রপথে ভারতকে ভাতে মারার কৌশলও নিয়েছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকার।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান গ্রুপের দেশগুলো শিগগিরই দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে একটি আচরণবিধি চালু করতে চলেছে। ওই আচরণবিধিতে বেশ কিছু শর্ত যোগ করতে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। সেগুলো যুক্ত হলে, আসিয়ান গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে বাইরের কোনো দেশ সামরিক মহড়া করতে পারবে না। আসিয়ান-এর বাইরের কোনো দেশ যাতে ওই অঞ্চল থেকে তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ করতে না পারে, সে কথাও থাকছে চীন প্রস্তাবিত শর্তে।
চীন নিজে আসিয়ান গোষ্ঠীভূক্ত নয়। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এতে কিছু এসে যায় না। কারণ, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রভাব অনেকটাই। অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলো চাইলেই বেইজিংয়ের প্রতি কড়া অবস্থান নিতে পারে না। নয়াদিল্লির জন্য এটা বাস্তব সত্য। ভারত-বিরোধী শর্ত আসিয়ান-বিধিতে ঢোকানোর এই চীনা প্রয়াস নিয়ে তাই নাম না করে মুখ খুলেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার। সম্প্রতি পঞ্চদশ পূর্ব-এশিয়া সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “এই আসিয়ান-বিধি যেন কোনো তৃতীয় পক্ষের মর্জিমাফিক না হয়। আমরা চাই, জাতিসঙ্ঘের সমুদ্রনীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবের সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ হোক।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত মাসেই ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পর এই বিষয়টি নিয়ে এক জোট হয়েছিল দু’দেশ। আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমুদ্রপথে উদার এবং উন্মুক্ত নীতি নেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল একমাত্র চীনের অবস্থানকে মাথায় রেখেই। এ ছাড়া, ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের মতো দেশগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে আসিয়ান গোষ্ঠীর দেশগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে বাণিজ্যিক ও সামরিক কার্যকলাপ নিয়েও কথাবার্তা এগিয়েছে। ভিয়েতনামে অপরিশোধিত তেলের ব্লকগুলোতে ভারতের বিনিয়োগ কম নয়।
নয়াদিল্লিতে কূটনীতিকেরা মনে করছেন, এই সব উদ্যোগ চিরতরে বন্ধ করে দক্ষিণ চীন সাগরে একচ্ছত্র আধিপত্য রাখাই বেইজিংয়ের লক্ষ্য।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা