আজারবাইজানকে রক্ষায় তুর্কি সেনাবাহিনী
আজারবাইজানকে রক্ষায় তুর্কি সেনাবাহিনী - ছবি : সংগৃহীত
নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়ার সাথে যুদ্ধের পর এবার আজারবাইজানে শান্তিরক্ষী হিসেবে তুরস্কের সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। দেশটিতে তুরস্কের সেনা মোতায়েন করতে অনুমোদন চেয়ে দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পক্ষে এই প্রস্তাব জমা দেয়া হয়।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার সংঘাতে তুরস্ক সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন করে আসছে। এর অংশ হিসেবেই আজারবাইজানের ভূখণ্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তুরস্কের পার্লামেন্টে দেয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, আজারবাইজানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এর মধ্য দিয়ে তুরস্কের জাতীয় স্বার্থও সুরক্ষিত হবে। আপাতত এক বছরের জন্য তুরস্কের শান্তিরক্ষী বাহিনী আজারবাইজানে মোতায়েন করার কথা ভাবছে আঙ্কারা।
এদিকে আজারবাইজানে তুর্কি শান্তিরক্ষী মোতায়েন প্রস্তাবনা নিয়ে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে বলে জানিয়েছে তুর্কি গণমাধ্যম ইয়েনি শাফাক।
এদিকে আজারবাইজানে তুরস্কের সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনার বিষয়ে মতামত জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, তুর্কি সেনারা আজারবাইজানের অভ্যন্তরে থেকে কার্যক্রম চালাবে এবং তারা নাগার্নো-কারাবাখ এলাকায় ঢুকবে না।
এর আগে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা কয়েক দফা ব্যর্থ হওয়ার পর সম্প্রতি আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে কার্যকর যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে রাশিয়া। এরপরই বিরোধপূর্ণ নাগার্নো-কারাবাখ এলাকায় শান্তিরক্ষী সেনা মোতায়েন করে মস্কো।
আন্তর্জাতিক ভাবে নাগার্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের এলাকা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই আর্মেনিয়ার মদতে সেখানে স্বাধীন প্রশাসন চালিয়ে আসছিল এথনিক আর্মেনিয়ানদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী একটি গোষ্ঠী। বিচ্ছিন্নতাবাদী সেই গোষ্ঠী নিজেদের আজারবাইজানের অংশ হিসেবে দেখতে চায় না। দীর্ঘ দিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার বিরোধ। গত দেড় মাসে যা চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছানোর পরই সেখানে সামরিক অভিযান শুরু করে আজারবাইজান।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা ও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা নস্যাৎ
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানকে হত্যা করে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস-এনএসএস। কয়েকজন বিপজ্জনক সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা এই অপচেষ্টা করে বলে দাবি সংস্থাটির।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক প্রধান আর্তুর ভেনেতসিয়ান, রিপাবলিকান পার্টির পার্লামেন্টারি দলের প্রধান ভাহরাম বাঘদাসারিয়ান এবং যুদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক আশোট মিনাসায়ানকে আটক করা হয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে আর্মেনিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস জানায়, সন্দেহভাজনরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করছিলেন এবং তার জায়গায় নতুন কাউকে ক্ষমতায় বসানো নিয়েও ষড়যন্ত্র করছিলেন।
উল্লেখ্য, আজারবাইজানের সাথে যুদ্ধে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় নাগরনো-কারাবাখের শান্তিচুক্তির বিরোধিতায় গেল কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে আর্মেনিয়ায়। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত আছে। আন্দোলনকারীরা শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের পদত্যাগের দাবি জানান। কিন্তু ফেসবুক লাইভে নিজের বক্তব্য জানান প্রধানমন্ত্রী। পদত্যাগের সম্ভাবনাও খারিজ করে দেন তিনি। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠল।
প্রায় ছয় সপ্তাহ যুদ্ধ চলার পর গত সোমবার রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং রাশিয়া একটি চুক্তি সই করে। নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে সেই শান্তিচুক্তিতে সব চেয়ে লাভ হয়েছে আজারবাইজানের।
এ দিকে আজারবাইজানের সাথে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধে দুই হাজারের বেশি আর্মেনীয় সৈন্য মারা গেছে। শনিবার আর্মেনিয়া এ কথা জানায়। আর্মেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আলিনা নিকোগোসান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অজ্ঞাত একজনসহ আমাদের ফরেনসিক সার্ভিস এ পর্যন্ত দুই হাজার ৩১৭ জন সৈন্যের লাশ পরীক্ষা করেছে।’ নিহত আর্মেনীয় সৈন্যদের সর্বশেষ যে মৃতের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছিল সেই তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় এক হাজার বেশি।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ, আনাদোলু ও ইয়েনি শাফাক