সু চিকে যে বার্তা দিলো জনগণ
সু চি - ছবি : সংগৃহীত
মিয়ানমারের কোটি কোটি ভোটার এক সপ্তাহ আগে গণতন্ত্রের পক্ষে সর্বাত্মক সমর্থন ও রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ততার বিরোধিতার কথা প্রকাশ করেছে।ভোট দিতে দেশজুড়ে লোকজন ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণভাবে লাইন ধরেছে, কোনো কোনো স্থানে প্রচণ্ড রোদে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত।
ফলাফল ছিল অনুমেয় :আং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। এমনকি ৫ বছর আগের ভূমিধস জয়ের চেয়েও বড় জয় পেয়েছে এবার। কয়েকটি জাতিগত রাজনৈতিক দল কিছু আসনে জয়ী হলেও তা প্রত্যাশামতো ছিল না।
ক্ষমতাসীন দলের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিলেও দেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান ছিল যে তারা যেন দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত না করে বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার জোরদার করেন। এটি আসলে অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার আহ্বান।
নির্বাচনে যে ইস্যুটি সামনে আসেনি তা হরো রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা নির্যাতন। মিয়ানমারের বেসামরিক নেতা আন্তর্জাতিক সম্মান খুইয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কারণে তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছেন। সামরিক বাহিনী ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, তারা গত দুই বছর ধরে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে দিন কাটাতে বাধ্য করেছে।কিন্তু এগুলো দেশে সু চির ভাবমূর্তি নষ্ট করেনি। বরং বলা যায়, বেড়েছে।
বস্তুত, তিনি গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে রক্ষা করেছেন। গণহত্যা ও জাতি নির্মূলের অভিযোগগুলোর সাফাই গাওয়ার মাধ্যমে তিনি মিয়ানমারে দেশের জননী হিসেবে তার ভাবমূর্তি জোরদার করেছেন।
তবে রাখাইন এলাকায় সহিংসতার কারণে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশে ভোট বাতিল করে। এর ফলে রোহিঙ্গারা কার্যত ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলে। নাগরিক সমাজের অ্যাক্টিভিস্টদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২০ লাখ ভোটার ভোটাধিকার হারিয়েছে।এমনকি চিন, শান, কচিন, কায়িন ও মন রাজ্যগুলোতে ভোট দিতে অনুমতি দেয়া হয়নি। অবশ্য এতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস করলেও জাতীয় পর্যায়ে আং সান সু চির ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি।
এনএলডি পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই ৮০ ভাগেরও বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। তারা ১৪টি রাজ্য ও আঞ্চলিক পার্লামেন্টের মধ্যে ১২টিতে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। কেবল রাখাইন ও শান রাজ্য লাল স্রোত এড়াতে পেরেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি হিসাবে দেখঅ যায়, এনএলডি মোট ৩৯৬টি আসন (নিম্ন কক্ষে ২৫৮টি, উচ্চ কক্ষে ১৩৮টি) আসন পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও পরবর্তী সরকার গঠন করতে দরকার হয় ৩২২টি ভোটের। উল্লেখ্য, পার্লামেন্টের ৬৪৪টি আসনের মধ্যে ১৬৬টি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্ধারিত থাকে। আর নিরাপত্তাগত কারণে ২২টি আসনের ভোট বাতিল করা হয়।
সাবেক ক্ষমতাসীন দল, সামরিক-সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (তারা ২০১৫ সালে এনএলডির কাছে ক্ষমতা হারায়) মাত্র ৩৩টি আসন পেয়েছে। তারা ও অন্য ১৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এই আবেদন বাতিল করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্টার সেন্টারের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন,নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম হয়নি।
তবে সংবিধানের থাকা বিধানের বলে পার্লামেন্টে ২৫ ভাগ আসন বহাল রাখছে সামরিক বাহিনী। তারা সীমান্ত, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র- তিনটি মন্ত্রী পাচ্ছে।
বেশির ভাগ ভোটার মনে করেন, নির্বাচনী ফলাফলে বীর-বন্দনা, সামরিকবাহিনী-বিরোধী অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।তবে এনএলডি বিপুলভাবে জয়ী হওয়ায় অনেকে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাবের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রখ্যাত অ্যাক্টিভিস্ট থিনজার শুনলি ইয়ি বলেন, সু চি ও এনএলডির বিপুল জয়ের অর্থ হলো তারা তার ব্যর্থতা সত্ত্বেও এখনো তাকে সমর্থন করে।তারা তাকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।
আবার অনেক বিশ্লেষক বিপুল জয় সত্ত্বেও এনএলডিকে জাতিগত দলগুলোর কাছে গিয়ে তাদের সমর্থন আদায় করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবশ্য, এনএলডি ইতোমধ্যেই জাতিগত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাওয়া শুরু করেছে। তারা আঞ্চলিক ও রাজ্য সরকারের মধ্য ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা ও সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাতে চায়।
সূত্র : এসইএম