সাবমেরিন ভাড়া করছে কেন ভারত?
সাবমেরিন ভাড়া করছে কেন ভারত? - ছবি : সংগৃহীত
ভারত বর্তমানে তিনটি পরমাণু সাবমেরিন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে : অরিহন্ত-ক্লাস এসএসবিএন, এসএসএন ও ১৩,৫০০ টনের এস-৫ ক্লাস এসএসবিএন। কিন্তু দেশটি এখনো তার নিজস্ব সাগর শক্তি অর্জন থেকে অনেক দূরে রয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার কে-১৫২ ভারতে আইএনএস চক্র ২ নামে চীনা সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে ভারত মহাসাগরে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে।
পরমাণু সাবমেরিন কর্মসূচিতে আত্মনির্ভরতা অর্জনে ভারতের সফলতা অর্জন অনেক দূরের বিষয় হওয়ায় দেশটি ২০১২ সালে ১০ বছরের জন্য ৯০০ মিলিয়ন ডলারে রুশ জাহাজটি ভাড়া নেয়। ভাড়ার মেয়াদ আরো তিন বছরের জন্য বাড়ানো হতে পারে।
চুক্তির আওতায় ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার ও নাবিকেরা সাবমেরিন সার্ভিসিং ও পরিচালনা শেখার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। ভারত তার পরমাণু-চালিত অরিহন্ত-ক্লাস সাবমেরিনে নিয়োগের জন্য তার সাবমেরিন ক্রুদের প্রশিক্ষণের জন্য চক্র ২-কে ব্যবহার করছে।
ভারত ২০১৯ সালে আকুলা ১ পরমাণু-চালিত অ্যাটাক্ট সাবমেরিন ভাড়া নেয় রাশিয়ার কাছ থেকে। ১০ বছরের জন্য ভাড়া নেয়া হয় ৩ বিলিয়ন ডলার। চক্র ৩ নামে পরিচিত হবে এই সাবমেরিন। ২০২৫ সালে ভারতের হাতে সাবমেরিনটি স্থানান্তর করবে রাশিয়া।
চক্র ৩-এর প্রধান লক্ষ্য হলো ভারত যে ছয়টি পরমাণু অ্যাটাক্ট সাবমেরিন তৈরী করার পরিকল্পনা করছে, সেগুলো পরীক্ষা করা। অবশ্য চীন-ভারত উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার আকুলা ক্লাস পরমাণু সাবমেরিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চীন ও পাকিস্তানের তুলনামূলক দুর্বল সাবমেরিনবিধ্বংসী যুদ্ধ সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে বলা যায়, এই সাবমেরিন হবে ভারতের জন্য মূল্যবান সম্পদ। আকুলার নক্সা পরিমার্জিত করে একে নতুন অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে, শব্দ কমানো হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম দিকে ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন প্রসিডিউর ২০২০-এর আলোকে ভারত সরকার তার তিন বাহিনীকে – সেনা, নৌ ও বিমান- কেনার বদলে সরঞ্জাম ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে ব্যয় বেশ কমে যাবে এবং লাইফ সাইকেল ব্যয়ও হ্রাস পাবে। ভাড়া নেয়ার মাধ্যমে অনেক আইটেমই সংগ্রহ করা যায়।
ভারত দেশীয়ভাবে পরমাণু সাবমেরিন তৈরীর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অরিহন্ত-ক্লাস সাবমেরিনের ৬০ ভাগ পণ্যই স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা। ভারতীয় নৌবাহিনী রাশিয়ার সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বেশ উপকৃত হচ্ছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৮৬ সালে প্রথম তার পরমাণু সাবমেরিন ভাড়া দেয়। ওই সময় চার্লি-ক্লাস পরমাণু ক্রুইজ মিসাইল সাবমেরিন ১০ বছরের জন্য নয়া দিল্লির কাছে ভাড়া দেয় মস্কো।
সূত্র : ইউরেশিয়ান টাইমস
পানিতে ভাসল ভারতের পঞ্চম স্করপেন সাবমেরিন ‘আইএনএস ভাগির’
সাগরে সমরসজ্জায় আরও শক্তিশালী ভারত। এবার জলে অবাধ রাজত্ব চালাতে নৌবাহিনীর হাতে আসছে আরও এক অত্যাধুনিক স্করপেন সাবমেরিন। বুধবার মাজগাঁও ডক থেকে যাত্রা শুরু করে স্করপেন ক্লাসের পঞ্চম ডুবোজাহাজ ‘আইএনএস ভাগির’।
এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোয়া থেকে সাবমেরিনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রীপদ নায়কের স্ত্রী বিজয় নায়ক। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রজেক্ট-৭৫ এর অন্তর্গত ফরাসি অস্ত্রনির্মাতা ডিসিএনএস-এর ডিজাইন করা ছয়টি স্করপেন বা কালভরি ক্লাস সাবমেরিন তৈরি করছে ভারত।
এরমধ্যে ‘আইএনএস কালভরি’ ও ‘আইএনএস খান্ডেরি’ নামের দু’টি স্করপেন সাবমেরিন ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘আইএনএস কারাঞ্জ’ ‘আইএনএস কারাঞ্জ’ ও আইএনএস ভেলার ‘সি ট্রায়াল’ সাগরে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। এই ক্লাসের শেষ সাবমেরিন আইএনএস ভাগশির-এর নির্মাণ চলছে।
এই ডুবোজাহাজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে স্টেট অফ দ্য আর্ট টেকনোলজি। প্রি-গাইডেড মিসাইল ব্যবহার করে প্রায় নিঃশব্দে শত্রুকে জলের নিচে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে ‘আইএনএস কারাঞ্জ’। প্রায় ৬৭ মিটার লম্বা, ওজনে দেড় হাজার টনেরও বেশি এই ডুবোজাহাজ চওড়ায় প্রায় সাড়ে ছয় মিটার। এটি এমন ভাবে বানানো হচ্ছে যাতে দীর্ঘক্ষণ জলের তলায় ডুবে থাকতে পারে।
‘স্করপেন’ থেকে অনায়াসে যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার টর্পেডো এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে। শুধু তাই নয় প্রায় শব্দহীন এই সাবমেরিনটিকে জলের তলায় খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। গোপনে শত্রুর জলসীমায় ও বন্দরের চারপাশে ‘মাইন’ বিছিয়ে দিতে এটির জুড়ি মেলা ভার।
২০১৭-সালেই যাত্রা শুরু স্করপেন ক্লাসের ‘আইএনএস কালভরি’ ও ‘আইএনএস খান্ডেরি’। ওই দুই ডুবোজাহাজও অত্যন্ত ঘাতক। ওই সাবমেরিন দুটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক টর্পেডো ও মিসাইল যা দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা লক্ষ্যেও নির্ভুল ও বিধ্বংসী আঘাত হানতে সক্ষম।
স্টেলথ প্রযুক্তি বা লুকিয়ে থাকার অসাধারণ ক্ষমতার জন্য এই সাবমেরিনটি সোনার বা রাডারে প্রায় অদৃশ্য।