মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের অর্থনীতি!
মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের অর্থনীতি! - ছবি : সংগৃহীত
১৫টি দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির ৩০ ভাগ নিয়ে গঠিত রিজিওন্যাল কমপ্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নিঃসন্দেহে কোভিড-১৯ বিপর্যয় মোকাবেলা ও মহামারি-পরবর্তী যুগের সুবিধা লাভ করার লক্ষ্যে প্রবৃদ্ধি গতিশীলতা আনার শক্তি সঞ্চারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তুলনামূলক রক্ষণশীল অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণকারী ভারত এই তালিকায় নেই। সাত বছর আলোচনার পর দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশটি ২০১৯ সালের শেষ দিকে আরসিইপি-সম্পর্কিত আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
ভারত হলো এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমণের শিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ভারত সম্ভবত আঞ্চলিক শিল্প পুনর্গঠনের নতুন রাউন্ড ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফাস্ট লেন মিস করবে।
চীনা পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত সক্রিয়ভাবে চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছে এবং একসময় চীনের সাথে সম্পর্কিত সব আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। অবশ্য, আরসিইপিতে সই হয়ে যাওয়ার ফলে চীন থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সুযোগ ভারতের জন্য আরো কমে যেতে পারে।
ভারত আর যে পথটি গ্রহণ করতে পারে তা হলো পাশ্চাত্য বিশ্বের পাশাপাশি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার আরো ঘনিষ্ঠ হওয়া। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের উপস্থিতিহীন বা তুলনামূলক অনেক কম উপস্থিতিপূর্ণ একটি বিশ্ব শিল্প শৃঙ্খল তৈরী করা।
জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ভারত তথাকথিত সাপ্লাই চেইন রেসিলিয়েন্স ইনিশিয়েটিভ (এসসিআরআই) গঠন করতে চাচ্ছে চীনা শিল্প শৃঙ্খলের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার জন্য। এসসিআরআইয়ে বাস্তব কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এখন জাপান ও অস্ট্রেলিয়া যোগ দিয়েছে আরসিইপিতে। তারা এখন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের ১০টি দেশের সাথে যোগ দিয়েছে অবাধ বাণিজ্য জোন প্রতিষ্ঠায়। এটি হতে যাচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম জোন।
এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ভারত সক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের সাথে কাজ করছে। এটি মূলত রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট কৌশল, এতে অর্থনৈতিক অবস্থান রয়েছে সামান্যই। নয়া দিল্লির রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো চীনের প্রভাব হ্রাস করা। এই লক্ষ্য নির্ধারণের কারণে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণ থেকে তারা আরো পিছিয়ে পড়ছে।
এশিয়ার যেসব দেশের অর্থনীতি দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তাদের বেশির ভাগই শুরুতে তা করতে পেরেছে রফতানি বাড়িয়ে। ক্লোজড অর্থনীতির কোনো দেশ পথে টিকতে পারে না। কাছের বিশাল মুক্ত বাণিজ্য জোন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার অর্থ হলো মোদি প্রশাসনের মেইক-ইন-ইন্ডিয়া পরিকল্পনার সুযোগ খোয়ানো।
ভয়াবহ মহামারি এখনো বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ১৫টি দেশের নেতারা ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে এই বিশাল বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে। টেরিফ ও নন-টেরিফ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা হলেই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২.১ ভাগ ও বিশ্ব অর্থনীতিতে ১.৪ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯-এ ভারতীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এপ্রিল-জুন কোয়ার্টারে রেকর্ড ২৩.৯ ভাগ সঙ্কোচন ঘটেছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সঙ্কোচন হতে পারে ১০.৩ ভাগ। আরসিইপি হয়তো এখনো ভারতের জন্য একটি সুযোগ রেখে দিচ্ছে, কিন্তু নয়া দিল্লি যদি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে না পারে যে তার আঁকড়ে ধরা কৌশলই তার পথে বাধা হয়ে আছে, তবে দেশটির পক্ষে নতুন পথ যাত্রা করা কঠিনই হবে।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস