ট্রাম্প যেভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হবেন
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
গত ৭ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল হিসাবে জো বাইডেন অন্তত ২৭৯ ইলেক্টোরাল কলেজের আসন পেয়ে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন জানা গেল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বিতর্ক, আপত্তি বা মামলার নিষ্পত্তি এখনো খতম হয়নি। তবে ধীরে ধীরে প্রতিটি মামলা বা ঘটনায় ট্রাম্প-ক্যাম্পের তোলা আপত্তি বা অভিযোগের কোনো ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলেই তা খারিজ হয়ে ক্রমে অনেক কিছুর নিষ্পত্তি হয়ে চলেছে। তবু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে আমেরিকার আকাশের কালো মেঘ ও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। এর পেছনের প্রধান কারণ সম্ভবত, খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু ঘোষণা ও পাল্টা পদক্ষেপ। যেমন- তিনি নিজেই হুমকি দিয়েছেন যে- ‘তিনিই এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন অথচ তাদেরকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা হেরেছেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।’ কিন্তু এসব ইস্যুতে ট্রাম্প-ক্যাম্পের আগ্রহ প্রমাণসহ অভিযোগ তুলে ধরার চেয়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা ছড়ানোর চেষ্টা অনেক বেশি। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের পম্পেইকে দিয়ে ঘোষণা করিয়েছেন যে, আগামী ২০ জানুয়ারির (দেশের নতুন প্রশাসনের শপথ নেয়ার দিন) পরে ট্রাম্পের সরকার কার্যক্রম চালু রাখবে। তাই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অজানা আশঙ্কা যা আগে কখনো আমেরিকা দেখেনি তা আগে থেকেই তাদের সমাজে ছেয়ে বসে আছে। যদিও সেটা বাড়ছে, এমনটা বলা যাবে না।
বরং ছোট ছোট পদক্ষেপে ক্রমে অভিযোগগুলো আদালতে বা নির্বাচনী কর্তাদের হাতে প্রত্যাখ্যান বা নাকচ হয়ে যাচ্ছে। ১৪ নভেম্বরের শুরুতে, ভোর রাতের হিসাবে কয়েক ঘণ্টা আগে প্রকাশিত কয়েকটা খবরের শিরোনাম এ রকম- ১. পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনী কর্তারা নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আদালতে ট্রাম্পের মামলার ফেডারেল বিচারককে জানিয়েছেন, যেন তিনি মামলা বাতিল ঘোষণা করে দিতে পারেন এখন- রয়টার্সের প্রকাশিত রিপোর্ট। ২.আমেরিকার নিবার্চনী কর্তারা ট্রাম্পের কারচুপির অভিযোগ বা দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন- বিবিসি ইংরেজির রিপোর্ট। তারা আরো বলেছেন, ‘এবারের ভোট ব্যবস্থায় কোনো ভোট বাতিল হয়েছে বা হারিয়ে গেছে, পরিবর্তন করা হয়েছে অথবা কোনো ধরনের কালোদাগ লেগেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ বরং আমেরিকায় অনুষ্ঠিত ‘ভালো নির্বাচনগুলোর অন্যতম এবারের ভোট।’ ৩. বাইডেন অ্যারিজোনার আসনগুলোও পেয়ে নিজের ইলেক্টোরাল কলেজ আসন ২৯০ তে নিয়ে আরো পোক্ত হতে যাচ্ছেন- রয়টার্সের প্রকাশিত রিপোর্ট। ৪. এটা বিবিসি বাংলার ফ্যাক্ট চেক টিমের গবেষণা; মানে, তাদের ভাষায় ‘বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম’-এর ১০ নভেম্বরের রিপোর্ট। তারা বলছেন, ‘কোনো তথ্যপ্রমাণ না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তৃতা-বিবৃতিতে বেশ কয়েকটি পোস্টের কথা উল্লেখ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রচারণা শিবির।’
এভাবেই ট্রাম্পের অভিযোগের পাটাতন ক্রমে নিজ পায়ের নিচের মাটি হারিয়ে চলেছে। তবু সব অভিযোগ শেষ হয়েছে এমন নয়। এর প্রধান কারণ, আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় আমাদের মতো কোনো কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল নির্বাচনী অফিস বলে কিছু নেই। ভোট নেয়া, তদারকি ও ফলাফল ঘোষণা প্রত্যেকটা রাজ্যের দায়িত্ব এবং তা তাদেরই নিজ নিজ আইনে পরিচালিত হতে হয়; যাতে আবার রাজ্যে রাজ্যে কিছু আইনগত ভিন্নতাও আছে। তাই এখন ট্রাম্পের অভিযোগগুলো নিষ্পন্ন হচ্ছে, প্রতিটি রাজ্যে এবং মূলত নির্বাচন অফিস ও আদালতে। তবু একটা ধারণা হিসেবে বলা যায়, এগুলো নিষ্পত্তি করতে আগামী ২৩ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের নির্বাচনী কর্মকর্তারা ফলাফল ঘোষণার কাগজে স্বাক্ষর করা শেষ করতে পারেন। তখন এই ফলাফল ‘অফিসিয়ালি ঘোষিত ফলাফল’ বলে বিবেচিত হবে।
আর তখন ট্রাম্পের অফিস ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হয়ে যাবে। তা না করলে আদালত ট্রাম্পের অফিসকে অকার্যকারিতার জন্য অভিযুক্ত করতে পারবেন এবং পাল্টা করণীয় নির্দেশ জারি করতে পারেন। অর্থাৎ ক্রমে ট্রাম্পের জন্য, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার বাধ্যবাধকতা কঠিন ও শক্ত হয়ে আসছে।
এভাবে অনুমান করা যায়, ট্রাম্প যতই হুমকি দিন তবু, ২০ জানুয়ারির আগেই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু ও সম্পন্ন করতে ট্রাম্প বাধ্য হবেন। আর সবার ওপরে আমেরিকার মানুষ স্থিতিশীলতা চায়, দেশে একটা ফাংশনাল সিস্টেম দেখতে চায়; মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো হতাশাগ্রস্ত জীবনের কোনো দেউলিয়া ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন বলে, ‘আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করব না’-এই দায়দায়িত্বহীন বাক্য কিংবা বিশৃঙ্খলা মানুষ দেখতে চায় না। জীবন ইতিবাচক এবং তা আশা-ভরসা নিয়েই চলে। তাই আমরা বরং এখন জো বাইডেনের বিজয়ে ও হবু বাইডেন প্রশাসনের চলার পথের নীতি-পলিসি কী হতে যাচ্ছে আলোচনা সেদিকে নিচ্ছি।