মালাবার নৌমহড়া : ভারতের প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা

চেঙ জিজহঙ | Nov 14, 2020 07:15 am
মালাবার নৌমহড়া

মালাবার নৌমহড়া - ছবি : সংগৃহীত

 

মালাবার নেভাল এক্সারসাইজ ২০২০-এর প্রথম ধাপে কোয়াডের চারটি দেশ- ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া অংশ নেয়। এই মহড়া ৩ নভেম্বর শুরু হয়ে ৬ নভেম্বর শেষ হয়। বঙ্গোপসাগরে হওয়া এই মহড়া নিয়ে মিডিয়া কভারেজ ছিল খুবই কম।

মহড়ায় নেতৃত্ব দেন ভারতীয় নৌবাহিনীর ইস্টার্ন ফ্লিটের ফ্ল্যাগ অফিসার কমান্ডিং রিয়ার অ্যাডমিরাল সঞ্জয় বাৎসায়ন। ভারতীয় নৌবাহিনীর ৫টি জাহাজ- ডেস্টোয়ার আইএনএস রণবিজয়, ফ্রিগেট আইএনএস শিবলিক, পেট্রোল জাহাজ আইএনএস সুকন্যা, ফ্লিট সাপোর্ট জাহাজ আইএনএস শক্তি এবং সেইসাথে সাবমেরিন আইএনএস সিন্ধুরাজ মহড়ায় অংশ নেয়। অন্য তিন দেশ মাত্র একটি করে রণতরী পাঠায়- আমেরিকান নৌবাহিনী থেকে ডেস্ট্রোয়ার জন এস ম্যাককেইন, অস্ট্রেলিয়া নৌবাহিনী থেকে ফ্রিগেট এইচএমএএস বালারাট, জাপানি মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্স থেকে ডেস্ট্রোয়ার জেএস ওনামি।
আগের মালাবার মহড়াগুলোর তুলনায় এবার একটি দেশ যুক্ত হলেও মহড়ার প্রথম ধাপটি ব্যাপকভাবে ছোট করা হয়।কোনো বিমানবাহী রণতরী এতে অংশ নেয়নি, যেসব রণতরী অংশ নেয়, সেগুলোও ছিল বেশ পুরনো।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার রণতরীয়গুলোকে তার নৌঘাঁটিতে প্রবেশ করতে দেয়নি ভারত। মহড়ার পর চার দেশের নাবিকরা বিশ্রামের জন্য তাদের নিজ নিজ স্থানে চলে গেছে। এটি ছিল পুরো প্রক্রিয়ায় জিরো কন্টাক্ট। ফলে চার দেশের অফিসার ও সৈন্যদের কোনো গ্রুপ ছবি তোলা হয়নি। এ ধরনের ঘটনা বিরল।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ভারত মহাসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দ্বিপক্ষীয় নৌমহড়া চালায়। এতে অংশ নিতে আমেরিকান নৌবাহিনী মোট চারটি রণতরীসহ নিমিটিজ বিমানবাহী রণতরীটি পাঠিয়েছিল। কিন্তু মালাবার মহড়ায় জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একটি করে রণতরী পাঠানোর ফলে বোঝা যাচ্ছে, চার দেশ কৌশলগত ইস্যুতে গভীরভাবে বিভক্ত।

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিতভাবেই মহড়া নিয়ে ব্যাপকভাবে আশাবাদী। কিন্তু জাপান ও ভারতের অনেক অস্বস্তি রয়েছে। সাবেক জাপানি প্রধানমন্ত্রী নাওতো ক্যান সম্প্রতি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে জাপান এশিয়ান ন্যাটো গড়তে চায় না। সীমান্তে চীনের সাথে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রয়েছে ভারত, তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা গড়তে চায়। কিন্তু এতে চীন ও এশিয়ার দেশগুলোর (যারা ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল নয়) মধ্যে সম্মিলিত বিরোধিতা সৃষ্টি হতে বাধ্য।

মালাবার নেভাল এক্সারসাইজের দ্বিতীয় ধাপটি হবে ১৭ থেকে ২০ নভেম্বর আরব সাগরে। শোনা যাচ্ছে, এতে বিমানবাহী রণতরী অংশ নেবে। ভারতের পশ্চিম দিকে ও ইরানের খুব কাছে আরব সাগরের অবস্থান। তেহরানের সাথে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে ভারত হয়তো এই মহড়ায় তার কোনো বিমানবাহী রণতরী পাঠাবে না। তা না করা হলে কেবল আমেরিকান নিমিটজ বিমানবাহী রণতরীই এতে অংশ নেবে।

ভারত নিজেকে বড় শক্তি মনে করে, তার জাতীয় মর্যাদা ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ৬ নভেম্বর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত বলেন, সামরিক সরবরাহের জন্য অন্যান্য দেশের বিধিনিষেধের হুমকি ও নির্ভরতা থেকে ভারতকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে। কৌশলগতভাবে আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য ভারতকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। আর একমাত্র এভাবেই ভারত তার বর্তমান ও অদূর ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো সামাল দিতে পারবে।

ভারত ক্রমবর্ধমান হারে বুঝতে পারছে যে চীনকে বৈরী হিসেবে চিহ্নিত করার ফলে পাশ্চাত্য ভারতের মহাসাগরীয় বিষয়াদিতে সামরিকভাবে অনেক বেশি সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। এটা হলো ভেড়ার পাহারার দায়িত্ব নেকড়েকে দেয়ার মতো বিষয়। ফলে আত্মনির্ভরতাই ভারতের একমাত্র বিকল্প।

লেখক : ভিজিটিং অধ্যাপক, সাউথওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব পলিটিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ল; সিনিয়র ফেলো, চারহার ইনস্টিটিউট; সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাচে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো।

সূত্র : এসএএম

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us