যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমস্যা ও ভূরাজনৈতিক ফাঁদে আসিয়ান
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমস্যা ও ভূরাজনৈতিক ফাঁদে আসিয়ান - ছবি সংগৃহীত
এশিয়ান ন্যাটো বা কোয়াডের মূল অ্যাজেন্ডা নিরাপত্তা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান নিয়ে ‘কোয়াড’। চেষ্টা করা হচ্ছে সদস্য বাড়িয়ে কোয়াড প্লাস করতে। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে কোয়াডকে প্রতিরক্ষার রূপ দিয়ে এশিয়ার ন্যাটো হিসেবে তৈরি করে চীনের মোকাবেলা করতে। চার বছর আগে ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতায় এসে ‘আরব ন্যাটো’ তৈরি করেছিলেন ইরানকে বাগে আনতে, তদ্রূপ চীনকে ঘায়েল করতে এশিয়ান ন্যাটোর যাত্রা। জাপানে গত ৬ অক্টোবর কোয়াডের দ্বিতীয় বৈঠক বসে। তবে বৈঠক আশানুরূপ হয়নি, এমনটি জানা যাচ্ছে।
এর পেছনে কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে সেটিতে একতরফা কোনো সুবিধা করতে পারছে না; অপর দিকে চীন বাণিজ্য এবং বিশ্বব্যাপী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রম বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রয়াস পেয়েছে ও টেকনোলজির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। আমেরিকাকে বিশ্বের ৪০০ সেনাঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধের পেছনে খরচের চাপ সামলাতে হচ্ছে। চীনের এই সমস্যা কম। চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভোক্তাদেরও বেশি দামে চীনা পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে ট্রাম্প ব্যাপকভাবে সমালোচিত। এ কারণে তিন হাজার ৫০০টি মার্কিন কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
কোয়াড জোট আসিয়ান দেশগুলোকে এখনো বস্তুনিষ্ঠ কিছুর সন্ধান দিতে পারেনি। আসিয়ানের উন্নয়নমুখী নীতি রয়েছে; নীতি রয়েছে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত থেকে বিশ্বে একটি ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ তৈরির। কোয়াড চীনবিরোধী জোট শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কোয়াডে যুক্ত হলে আসিয়ানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে, আসিয়ান টিকবে কী না বা চীন আসিয়ান দেশগুলোকে কব্জায় নেয়ার উদ্যোগ নেবে কী না সেসব প্রশ্নও রয়েছে। জাপান-বৈঠকে মূল প্রতিপাদ্য ছিল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আধিপত্য বিস্তার রোধ। এই সভা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম সভা ছিল, কোনো আসিয়ান সদস্য উপস্থিত না থাকলেও আসিয়ান দেশ নিয়েও আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া তারপর জাপান, বলতে গেলে দুনিয়ার এপার ওপার।
মাঝখানে দক্ষিণ চীন সাগরের পাশের দেশ, তাইওয়ান প্রণালী, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ এসব অনেক এলাকা রয়েছে যেগুলো কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাজনৈতিক কৌশলীরা মনে করছেন, কোয়াড হয়তো অচিরেই আরো বড় হয়ে আরো দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে চীনের চতুর্দিকে সামরিক ব্যূহ রচনা করবে। কোয়াড হয়তো তখন ‘কোয়াড প্লাস’ সংস্থায় পরিণত হবে। তবে আসিয়ানকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কোনো ‘হট কেক’ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। চীনও বসে নেই, এমন কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নেয়ার চেষ্টা করলে তাইওয়ান নিয়ে গোলযোগ শুরু হতে পারে। চীন ইতোমধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপ দেশগুলো এবং আফ্রিকার কিছু দেশে প্রভাব বিস্তার করেছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড বা বিআরই মহাপ্রকল্পের মাধ্যমে স্থল ও জল পথে যেভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে সেটি এখন পর্যন্ত কোয়াডের চেয়ে বহু শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে।
কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য হলো ইন্দো প্যাসিফিকে চীনের অভিযাত্রাকে রুখে দেয়া। কোয়াডের প্রথম সভাকে চীন ‘সিকিউরিটি ডায়মন্ড’ বলে উল্লেখ করেছে। চীন বলেছে, এতে যোগদানকারী দেশগুলোকে তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে চারটি দেশের সাথে চীনের বিস্তর তফাৎ। আমেরিকার নিরাপত্তার সাথে অস্ট্রেলিয়ার বা ভারতের নিরাপত্তা ইস্যু এক নয়। তাই কোয়াডের নিরাপত্তা কৌশল এককভাবে পরিমাপ করা অবাস্তব। অনেকে মনে করছেন, আসলে ভারতের জরুরি নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দল ভারী করছে। বতর্মান কোয়াড সভার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে মার্কিন মন্ত্রী পম্পেও বলেছেন, ‘আমাদের জনগণের নিরাপত্তার জন্য যৌথ প্রয়াস।’ কিন্তু পম্পেও ভারতের কাশ্মির বা আসামের মুসলমানদের নির্যাতনের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। অস্ট্রেলিয়ার সংখ্যালঘু ও নিপীড়িতদের বিষয়েও কিছু বলেননি। ইন্দো প্যাসিফিকের আরো দেশকে এখন সংযুক্ত করা নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আসিয়ান দেশগুলো চীনবিরোধী কোনো মোর্চায় যোগদান করতে অনিচ্ছুক। কোয়াডকে অর্থনৈতিক মুক্তির চেয়ে সামরিক ও আক্রমণাত্মক জোট হিসেবে মনে করছে আসিয়ান অঞ্চলের লোকজন। এখানকার নেতারা চীনের পড়শি হিসেবে থেকে চীনবিরোধী সামরিক মূর্ছায় যাওয়া মানে, অহেতুক একটি আপদ ডেকে আনা মনে করছেন। কোয়াডের চীনবিরোধী গর্জন দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশগুলোতে সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেবে, এমনই মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমস্যা ও ভূরাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে আসিয়ান যেন ফাঁদে পড়েছে। চলতি বছরের মধ্য জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী, দক্ষিণ কোরিয়ার, ইউএএস নিমিজ এবং ইউএসএস রোনাল্ড রিগান সামরিক মহড়া চালালে প্রতিবাদে চীনও সামরিক মহড়া চালায়। চীন দক্ষিণ চীন সাগরের ৯০ শতাংশ দাবি করে, সীমারেখাও তৈরি করেছে। এটি নিয়ে পাশের অনেক দেশের আপত্তি আছে। ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম প্রতিবাদ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও বিরোধকে কাজে লাগাতে চান।
তিনি একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন ‘চীন অফশোর সম্পদ আহরণের জন্য যেসব দাবি জানিয়েছে সেগুলো বেআইনি।’ আবার আসিয়ান দেশগুলোর আপত্তিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছে এবং কোয়াড কার্যক্রমে এসবকে পুঁজি করার চেষ্টা করছে ও মিডিয়াকে ব্যবহার করছে প্রচারণার জন্য। আমেরিকার এসব সামরিক হালচালে আসিয়ান দেশগুলো প্রতিবাদ করেনি আবার চীনকেও ক্ষ্যাপাতে চায় না। চীন তাড়াতাড়ি দেশগুলোর সাথে একটি ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ চূড়ান্ত করতে চায়। তবে চীনকে অনেক ছাড় দিতে হবে যদি এ মুহূর্তে কোনো প্রটোকলে হাত দেয়। শুধু সীমারেখা নিয়ে চীনের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যাওয়া লাভজনক হবে না। সব দেশের সাথে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বলয় অনেক বড় এবং বহু দিন ধরে গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র তাই সরাসরি চীনকে লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করেছে। তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দেয়া ছাড়াও হাইটেক অস্ত্রগুলো চালনায় সামরিক বিশেষজ্ঞরা তাইওয়ানে রয়েছেন।
আসিয়ানের পথচলা ও প্রাপ্তি অনেক; কম চাওয়া নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু। মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির উন্নয়ন তথা ৬০০ মিলিয়নের চেয়ে বেশি মানুষকে তুলনামূলকভাবে ভালো রাখার জন্য ৫০ বছর ধরে আসিয়ান কাজ করছে। ভারত একসময় আসিয়ানের সাথে যুক্ত ছিল। পরে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে বা আরসিইপিতে ভারতের স্বার্থ বিবেচিত হয়নি বলে আসিয়ান থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। ভারতের এই আচরণে আসিয়ান অনেকটা ক্ষুব্ধ।
চীনের কৌশলগত দাবিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে সত্য। কিন্তু এসব দেশ চীনের সাথে যে অর্থনৈতিক চুক্তি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে সেসব উপেক্ষা করতেও অনিচ্ছুক। চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে এতদঞ্চল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে টপকে চীনের সবচেয়ে বড় ট্রেডিং পার্টনার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চীনের ১৬ শতাংশ রফতানি আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে আর ১৪ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে। চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আরো বেশি রফতানির কৌশল নিয়েছে, যাতে বাণিজ্য যুদ্ধের ধকল কমে যায়।
বাণিজ্য যুদ্ধ ছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে চীনের সাথে সম্পর্ক কমে গেছে। ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি থেকে আমেরিকার নিজের প্রত্যাহারের ফলে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ে। চুক্তিতে নতুন রফতানি বাজার খোঁজা নিয়ে দেশগুলো সমস্যাক্রান্ত হয়। গত কয়েক বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ওয়াশিংটনের ‘ইন্টারেস্ট’ কমিয়ে আনা এবং চীনের প্রশাসন সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করায় অর্থনৈতিক লক্ষ্য বেশ এগিয়েছে; এখন আসিয়ান দেশগুলোর দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা প্রমাণ করবে কোন দিকে তারা পক্ষ নেবে।
কোয়াডের প্রতিটি সদস্য বিশেষ আঞ্চলিক পরাশক্তি। এসব দেশের সাথে চীনের দ্বিপক্ষীয় বিরোধ রয়েছে। কোনো একক বিষয় নিয়ে সম্মিলিত কোনো বিরোধ নেই। উদাহরণস্বরূপ জাপানের দ্বীপ নিয়ে বিরোধ মিটে গেলে চীন জাপানের মধ্যে আর কোনো বড় বিরোধীয় বিষয় থাকবে না। তখন জাপান চীনবিরোধী মোর্চায় থাকতে চাইবে না। তা ছাড়া সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, এই সব দেশের কোনোটিরই দক্ষিণ চীন সাগরে কোনো নিজস্ব স্থান নেই। কিন্তু কোয়াড দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য নিয়ে বির্তক করতে চায়। সোজা বিষয়টি এই, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ঘায়েল করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কোয়াড, কোয়াড প্লাস বা ‘এশিয়ার ন্যাটো’ এরই একটি ফসল। কোয়াডের ধারণা অবশ্য এক দশক পুরনো। চীন আভাস পাওয়া মাত্র নানা কৌশল ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সে রকম কোনো অগ্রগতি নেই। আবার কোয়াড সদস্য দেশে ও দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভও একটি ব্যাপক ও চতুর্মুখী কার্যক্রম।
কোয়াডের ভেতরেও অনেক সমস্যা রয়েছে। আমেরিকা মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি স্থাপন করতে চাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের কেউ-ই মার্কিন এসব ক্ষেপণাস্ত্র তাদের মাটিতে রাখতে আগ্রহী নয়। গত জুনে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত নৌ ও লজিস্টিক্যাল সহযোগিতা প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে। চীন চাইলে অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক ক্ষতি করতে পারে। অস্ট্রেলিয়া থেকে খাদ্যজাত পণ্য, কয়লা, মদ ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে। চীনা নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর অবরোধ দিতে পারে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চীন ইতোমধ্যে বার্লি ও গরুর গোশতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
জাপান চীনের বিপক্ষে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আসিয়ানের কিছু দেশের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার কাজ করছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে কেউ বসে নেই। জাপান ইতোমধ্যেই তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তি বাড়িয়েছে। হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ইজুমো ছাড়াও বিমানবাহী রণতরী বানাচ্ছে যাতে গভীর সমুদ্রে যুদ্ধ সহজ হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান জটিল পররাষ্ট্রনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে মিত্ররা সবসময় ‘নার্ভাস’ থাকছে।
ভারতের সমস্য আরো প্রকট। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর আওয়াজ তুলেছেন, ভারত কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না। এ দিকে কাশ্মির, লাদাখ, নিয়ে পাকিস্তান ও চীনের সাথে তার মুখোমুখি অবস্থান। চীন-ভারত যেসব বৈঠক করেছে ও অনুচুক্তি হয়েছে সেগুলো বাস্তবের সাথে মিলছে না। আসন্ন শীত মৌসুমের জন্য ভারত খুব চিন্তিত।
আসিয়ান দেশগুলো এখন চীন এবং রিজিওনাল জায়েন্টগুলোর মধ্যে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে। বর্তমানে কোয়াডে একটিও আসিয়ান দেশ সদস্য হিসেবে নেই। এমতাবস্থায় চীনের বিরুদ্ধে আসিয়ান দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর অপারেশন নিয়ে ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেছে বেইজিং।
অন্য দিকে পম্পেও বলেছেন, চীন অবৈধভাবে সমুদ্র দখল করছে, হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোকে উত্ত্যক্ত করছে, করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য লুকিয়েছে, জাতিগত উইঘুরদের গণহারে বন্দী করেছে, হংকং ও তাইওয়ানের গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বড় অর্থনীতির দেশ। আড়াই বছর ধরে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ চলছে। যদি দুই পক্ষই বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ইস্যুতে একে অন্যের সাথে সঙ্ঘাত দেখতেই থাকে তাহলে এসব মানবজাতির জন্য বিপজ্জনক বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৯৬ বছর বয়সী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যদি তাদের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ সমাধানে ব্যর্থ হয় তাহলে তা এক সশস্ত্র যুদ্ধে রূপ নেবে।’
চীন আগ্রাসী প্রতিবেশীদের প্রতিরোধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। চীনের হিসাবে, এর মধ্যে রয়েছে ভারত ও তাইওয়ান। চীনের কৌশল অনুসারে তাইওয়ানকে আস্তে আস্তে ছোট করে নিয়ে আসা হচ্ছে। আশপাশের দ্বীপগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে চীন। একমাত্র আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাইওয়ানকে মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান ও ভারত সীমান্তে চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তায় অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, চীন তার সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে এখন আগের মতো দেরি করবে না। তাই কয়েক স্থানে সম্ভাব্য যুদ্ধের শঙ্কা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে চরম সময় ঘনিয়ে আসতে পারে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব