এবার গদিও হারাবেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Nov 12, 2020 01:30 pm
এবার গদিও হারাবেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী!

এবার গদিও হারাবেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী! - ছবি সংগৃহীত

 

নাগর্নো-কারাবাখে শান্তি চুক্তি নিয়ে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছে আর্মেনিয়ায়। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকা ঘিরে ফেলেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের বক্তব্য, এই মুহূর্তে ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করুন প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনয়ান। ফেসবুক লাইভে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পদত্যাগের সম্ভাবনাও খারিজ করে দিয়েছেন।

প্রায় ছয় সপ্তাহ যুদ্ধ চলার পর গত সোমবার রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং রাশিয়া একটি চুক্তি সই করেছে। নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে সেই শান্তি চুক্তিতে সব চেয়ে লাভ হয়েছে আজারবাইজানের। চুক্তিতে স্থির হয়েছে, কোনো পক্ষই আপাতত আর যুদ্ধে জড়াবে না। রাশিয়ার সেনা এলাকায় টহল দেবে এবং শান্তি বজায় রাখবে। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধে যে যেখানে অবস্থান করছে, সেই এলাকা তার দখলে থাকবে। যুদ্ধে নাগর্নো-কারাবাখের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আজারি ফৌজ নিজেদের দখলে নিয়েছে। ফলে চুক্তিতে লাভ হয়েছে তাদেরই।

চুক্তি পছন্দ না হলেও আন্তর্জাতিক চাপে সই করতে বাধ্য হয়েছিলেন পাশিনয়ান। জানিয়েছিলেন, এই চুক্তি আর্মেনিয়ার মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন। ঠিক সে ঘটনাই ঘটছে। গোটা আর্মেনিয়া জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। বুধবার তাঁরা দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েন প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও। চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করা হয়। দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। চুক্তি ভেঙে ফের যুদ্ধের দাবিও করেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, চুক্তিতে নাগর্নো-কারাবাখের কার্যত গোটা এলাকাই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে আর্মেনিয়ার জনগোষ্ঠীর। এত দিন তাঁরাই সেখানে বসবাস করতেন।

আর্মেনিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর, বুধবার পার্লামেন্টেও ঢুকে পড়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পার্লামেন্টের মূল হলঘরে তারা ভাঙচুর চালিয়েছেন। স্পিকারকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাতেই বিশেষ বৈঠক ডাকা হয় পার্লামেন্টে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তাতে যোগ দেননি। তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তবে বুধবার তিনটি ফেসবুক লাইভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জনগণকে শান্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পদত্যাগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী যাই বলুন, আপাতত বিক্ষোভ থামার সম্ভাবনা দেখছে না আর্মেনিয়া। জনগণের স্পষ্ট দাবি, যে প্রক্রিয়ায় চুক্তি সই হয়েছে, তা অন্যায়। আর্মেনিয়াকে বঞ্চিত করা হয়েছে চুক্তিতে। ফলে সাধারণ মানুষ ওই চুক্তি মানেন না।

এদিকে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া যে কেন আরো আগে এখানে হস্তক্ষেপ করেনি এবং তাদের হার ঠেকাতে এগিয়ে আসেনি - সেটা নিয়ে।

কিন্তু একই সঙ্গে তারা বুঝতে পারছে যে এই লড়াইয়ের পরিণতি আরো অনেক খারাপ হতে পারত। লড়াই চলতে থাকলে এমন হতে পারত, নাগোর্নো-কারাবাখে আর একজন আর্মেনিয়ানও হয়ত থাকতে পারতো না।

যেটা পরিষ্কার তা হলো, এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। এই পুরো শান্তি ও সমঝোতার প্রক্রিয়ায় তারা কোথাও নেই।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে পুরনো বন্ধুত্বে চিড় ধরেছে।

নিকোল পাশিনিয়ান খুবই সফল পপুলিস্ট নেতা। একটি বড় গণআন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। এ ধরনের পন্থায় সরকার পরিবর্তন হলে সেটাকে ভ্লাদিমির পুতিন সবসময় পশ্চিমা দেশ দ্বারা অনুপ্রাণিত অভ্যুত্থান বলে সন্দেহ পোষণ করেন।

অতীতে আর্মেনিয়া যতটা রাশিয়ার উপর নির্ভর করত, সেটা পাশিনিয়ান পছন্দ করতেন না। কিন্তু এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত খুবই অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে - বিশেষ করে এই সংঘাতে তার বিপর্যয়কর পরাজয়ের পর।

এমনকি আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আরমান সার্কেশিয়ান নিজেও এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু এই চুক্তি এখন কার্যকর হয়ে গেছে এবং রাশিয়া পুরা পরিস্থিতির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। এটি আগে থেকেই রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের জায়গা এবং সেই জায়গাটা যেন তারা আবারো ফিরে পেয়েছে।
আর ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র : ডয়চে ভেলে, বিবিসি ও অন্যান্য 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us