আজারবাইজান-আর্মেনিয়া লড়াই : রাশিয়া আরো আগে এলো না কেন?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Nov 12, 2020 01:05 pm
আজারবাইজান-আর্মেনিয়া লড়াই : রাশিয়া আরো আগে এলো না কেন?

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া লড়াই : রাশিয়া আরো আগে এলো না কেন? - ছবি সংগৃহীত

 

নাগার্নো-কারাবাগ নিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে। রাশিয়ার মধ্যস্ততা মেনে নিয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কেন তার মিত্র আর্মেনিয়াকে রক্ষা করার জন্য আরো আগে এগিয়ে এলো না?

এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় - তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে পুরনো বন্ধুত্বে চিড় ধরেছে।

নিকোল পাশিনিয়ান খুবই সফল পপুলিস্ট নেতা। একটি বড় গণআন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। এ ধরনের পন্থায় সরকার পরিবর্তন হলে সেটাকে ভ্লাদিমির পুতিন সবসময় পশ্চিমা দেশ দ্বারা অনুপ্রাণিত অভ্যুত্থান বলে সন্দেহ পোষণ করেন।

অতীতে আর্মেনিয়া যতটা রাশিয়ার উপর নির্ভর করত, সেটা পাশিনিয়ান পছন্দ করতেন না। কিন্তু এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত খুবই অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে - বিশেষ করে এই সংঘাতে তার বিপর্যয়কর পরাজয়ের পর।

এমনকি আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আরমান সার্কেশিয়ান নিজেও এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু এই চুক্তি এখন কার্যকর হয়ে গেছে এবং রাশিয়া পুরা পরিস্থিতির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। এটি আগে থেকেই রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের জায়গা এবং সেই জায়গাটা যেন তারা আবারও ফিরে পেয়েছে।

রাশিয়া চেষ্টা করছিল যুদ্ধরত দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে।

আর্মেনিয়ার সঙ্গে তাদের একটি সমন্বিত নিরাপত্তা চুক্তি আছে। তবে তারা আবার এটাও বলছিল যে আর্মেনিয়া এই লড়াইয়ের ফলে আক্রান্ত হয়নি, কারণ লড়াইটা চলেছে আজারবাইজানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের ভেতরেই।

তবে ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক এই লড়াইয়ে সরাসরি আজারবাইজানের পক্ষে সমর্থন দেয়। এমনকি দরকার হলে বা অনুরোধ জানালে তারা সেখানে সামরিক সাহায্য পাঠাবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়।

দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে একটি সামরিক সংঘাতের খুবই বাস্তব সম্ভাবনা আছে। তবে সিরিয়া এবং লিবিয়ায় যে ধরনের খেলা অতীতে দেখা গেছে, এখানেও তুরস্ক এবং রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে একই রকমের খেলা দেখা যেতে পারে।

অতীতে ওইসব অঞ্চলে দেখা গেছে তুরস্ক এবং রাশিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ পরস্পরবিরোধী হলেও তারা কোনো না কোনোভাবে একটা অভিন্ন স্বার্থের অবস্থান খুঁজে পেয়েছে।

দক্ষিণ ককেশাসে এখন একই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। সেখানে শেষ মুহূর্তে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে এবং স্থল সেনা মোতায়েন করতে পেরেছে। এর মাধ্যমে তারা এটা নিশ্চিত করেছে, তাদের সম্মতি ছাড়া সেখানে কিছু করা যাবে না।

কাজেই এই সংঘাতে শেষ পর্যন্ত আজারবাইজানের মতো রাশিয়াও বিজয়ী হয়েছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে নিশ্চিতভাবেই এটাকে একটা বিরাট বিজয় হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আজারবাইজানের কিছু মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এই বলে যে, যুদ্ধে তাদের যে সুবিধাজনক অবস্থান ছিল, আজারবাইজান সেটার পুরো সুবিধে নিতে পারেনি।

এরা চাইছিলেন, নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে বিরোধের চূড়ান্ত ফয়সালা যেন এবারই করে ফেলে আজারবাইজান।

তবে আজারবাইজানের এই ধরনের অসন্তোষ রাস্তায় গড়াবে তেমন আশঙ্কা নেই। সেখানে বরঞ্চ রাস্তাঘাটে এক ধরনের বিজয়ের উল্লাসই চোখে পড়ছে বেশি।

আজারবাইজানের সরকারকে বিজয়ী বলে মনে করা হচ্ছে এই কারণে যে, তারা নাগোর্নো-কারাবাখের বড় একটা এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে। হাজার হাজার আজারবাইজানি শরণার্থী, যারা বহু বছর ধরে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে আছেন, তারা এখন ফিরে যেতে পারবেন। গত ৩০ বছর ধরে এরা শরণার্থীর জীবন যাপন করছেন।

এদিকে আর্মেনিয়ায় এটা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া যে কেন আরো আগে এখানে হস্তক্ষেপ করেনি এবং তাদের হার ঠেকাতে এগিয়ে আসেনি - সেটা নিয়ে।

কিন্তু একই সঙ্গে তারা বুঝতে পারছে যে এই লড়াইয়ের পরিণতি আরো অনেক খারাপ হতে পারত। লড়াই চলতে থাকলে এমন হতে পারত, নাগোর্নো-কারাবাখে আর একজন আর্মেনিয়ানও হয়ত থাকতে পারতো না।

যেটা পরিষ্কার তা হলো, এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। এই পুরো শান্তি ও সমঝোতার প্রক্রিয়ায় তারা কোথাও নেই।

ভবিষ্যতে তাহলে কী ঘটবে?

নাগোর্নো-কারাবাখের ওপর আর্মেনিয়ার দখলদারিত্ব চিরকালের জন্য চলতে পারে না। তবে একই সঙ্গে এই যুদ্ধের পুরো ধাক্কাটা কিন্তু আবার যাচ্ছে স্থানীয় আর্মেনীয় জনগণের উপর দিয়ে।

এটা ভালো খবর যে আর কোনো সৈন্য বা বেসামরিক মানুষকে এই অর্থহীন লড়াইয়ের জন্য প্রাণ দিতে হবে না।

আর যে সমস্ত আজারবাইজানি অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন, এটা তাদের জন্য সুখবর যে ৩০ বছর পর তারা আবার তাদের শূন্য গ্রামগুলোতে ফিরে যেতে পারবেন। আর নাগোর্নো-কারাবাখের বেসামরিক লোকজনও ঘরে ফিরে আসতে পারবে।

তবে নাগোর্নো-কারাবাখের বর্তমান বা ভবিষ্যৎ অবস্থা কী হবে, সেটার কোনো ইঙ্গিত কিন্তু এখনো নেই। সেখানকার প্রশাসন, আইন বা বিচার ব্যবস্থা কিংবা পুলিশ - এগুলো কারা পরিচালনা করবে, সেটা এখনো অস্পষ্ট।

এত দিন পর্যন্ত নাগোর্নো-কারাবাখ ছিল একটি স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র। তাদের এই প্রজাতন্ত্রকে আজ পর্যন্ত কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি আর্মেনিয়া পর্যন্ত নয়।

তবে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুটি জাতি - যারা এখন পরস্পরকে আগের চেয়েও আরো বেশি ঘৃণা করে - তারা কীভাবে এখন দুটি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বসবাস করবে।

এই যুদ্ধে যেরকম লড়াই হয়েছে, যে পরিমাণ রক্ত ঝরেছে, যে ধরনের সহিংসতা দু'পক্ষ দেখিয়েছে - তাতে আমার সন্দেহ এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটা স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে বহু বছর সময় লাগবে।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us