এবার কাশ্মিরে পাকিস্তান-তুরস্ক যৌথ পরিকল্পনা!

ইউনিস দার | Nov 12, 2020 08:20 am
ইমরান খান ও এরদোগান

ইমরান খান ও এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

 

নাগার্নো-কারাবাগের প্রচণ্ড লড়াই অবশেষে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়া একটি চুক্তিতে সই করেছেন। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ান ফেসবুকের এক পোস্টে এই চুক্তিকে ‘অব্যক্ত বেদনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তুরস্কের সমর্থিত আজারবাইজান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ নগরী শুশা (আর্মেনিয়ায় শুশি হিসেবে পরিচিত, যা ছিটমহলটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীও) দখল ছিল যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। আজারবাইজান চুক্তির আগে আরো কয়েক ডজন এলাকা দখল করার দাবি করে।

এদিকে যুদ্ধ অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী রাশিয়া শানিত্চুক্তির পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত নাগার্নো-কারাবাগে শান্তিরক্ষী সৈন্য মোতায়েন করে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই চুক্তি এখানকার সঙ্ঘাত অবসানের স্থায়ী রাজনৈতিক নিষ্পত্তির পথ দেখাবে বলে জানিয়েছেন।
বাকুর বিপরীতে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভ্যানে জনসাধারণের মনোভাব ছিল ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবসানের কথা ঘোষণা করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আর্মেনিয়ার জনসাধারণ রাস্তায় নেমে পড়ে। তারা প্রধান সরকারি ভবন ও পার্লামেন্টে প্রবেশ করে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে।
ইয়েরেভ্যানভিত্তিক আল জাজিরার সাংবাদিক নিল হাউয়ার বলেন, এখন নগরী বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি বিরাজ করছে।
আর্মেনিয়ার জনগণ মনে করছে, তারা প্রতারিত হয়েছে, তাদের সরকার আজারবাইজানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়াই যুদ্ধ পরাজয় স্বীকার করেছে।

অন্য দিকে আজারবাইজানের রাজধানীতে উল্লাস দেখা গেছে, নাগার্নো-কারাবাখের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারায় তারা খুশি। লোকজন আজারবাইজান ও তুরস্কের পতাকা দোলায়।
লোকজনকে তুরস্ক ও আজারবাইজানের পাশাপাশি পাকিস্তানের পতাকাও দোলাতে দেখা গেছে। প্রায় সব বৈশ্বিক ইস্যুতে এই দেশ দুটির নজিরবিহীন ঐক্যের বিষয়টিও জনসাধারণের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে।
আজারবাইজানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে পাকিস্তান, দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধঅন বলছেন, তার বাহিনী অধিকৃত নাগার্নো-কারাবাখে পুরোপুরিভাবে আজারবাইজানের অবস্থানকে সমর্থন করে। যুদ্ধের সময় তুরস্ককে পুরোপুরি সমর্থন করে পাকিস্তান। আজারবাইজান উভয় দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
তুরস্ক দেশটিকে সামরিকভাবে সহায়তা করেছে, দেশটির সশস্ত্র ড্রোন ওই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। নাগার্নো-কারাবাখের যুদ্ধ ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়িয়ে দিয়েছে, এই অংশীদারিত্ব আরো বড় উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারে।

অনেক আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে তুরস্ক ও পাকিস্তান অব্যাহতভাবে অভিন্ন ফ্রন্টে অবস্থান করছে। দুই দেশ তাদের সামরিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নজিরবিহীন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মগুলোতে কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থানকে পুরোপুরি সমর্থন করছে তুরস্ক। কাশ্মিরিদের ইচ্ছার আলোকে বিরোধ মেটানোর জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে তুরস্ক।
দুই দেশ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়ভাবেও একই অবস্থানে রয়েছে।

তুরস্ক ও পাকিস্তান এবং এমনকি আজারবাইজানের লোকজনের মধ্যেও এখন ক্রমবর্ধমান হারে এই আবেগ বাড়ছে যে দুই দেশের এখন কাশ্মিরের জন্য যুদ্ধ করা উচিত। আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের সিদ্ধান্তসূচক জয়ের পর পাকিস্তান ও তুরস্ক- উভয় দেশের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এখন কাশ্মিরকে সমর্থন করার জন্য উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্ঘাতে তুরস্কের সম্পৃক্ততার আশা করা খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করা। এমনটা কার্যত হতে পারবে না।

তুরস্কভিত্তিক কৌশলবিষয়ক বিশ্লেষক ইফতিখার গিলানি উইরএশিয়ান টাইমসকে বলেন, পররাষ্ট্রনীতির ইস্যুতে জনসাধারণের ভাবাবেগ স্থান পায় না। এখানে দেশের দীর্ঘ মেয়াদি স্বার্থই গুরুত্ব পায়।
তিনি বলেন, ভারতের সাথে তুরস্কের সুসম্পর্ক রয়েছে। দেশটি ভারতে সফট পাওয়ার সম্প্রসারণ করছে। ভারতীয় ছাত্রদেরকে ক্রমবর্ধমান হারে স্কলারশিপ দিচ্ছে তুরস্ক। ভারতের মুসলিমদের মধ্যে কাজ করার জন্য এনজিওগুলোর অনুমতি কামনা করছে।
এ ব্যাপারে পাকিস্তানের মতামত দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ বলছেন, এমনটা সম্ভব, কারো কারো মতে, তা অবাস্তব।
পাকিস্তানের এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, পাকিস্তানে এ ধরনের স্বপ্ন বিক্রি করবেন না। আমাদের এরদোগান বা আলিয়েভের মতো নেতা নেই। আমাদের বেসামরিক, রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।

কাশ্মিরের রাজনীতিবিদ ওয়াহিদ উর রহমান বলেন, কাশ্মির মুক্ত করার জন্য তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে এ ধরনের কোনো জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, এসব নেতা তাদের নিজ নিজ দেশের শ্রোতাদের খুশি করার জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে কাশ্মির নিয়ে কথা বলেন। সেখানেই তাদের ভূমিকা শেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, কাশ্মির ইস্যুতে ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করার কোনো আন্তরিকতা পাকিস্তান বা তুরস্কের নেই।
গিলানি আরেকটি পয়েন্ট উল্লেখ করেন। তিনি বরেন, তুরস্ক ও ভারতের মধ্যে সামরিক চুক্তি রয়েছে। ভারতের জন্য জাহাজ নির্মাণ করতে তুরস্ক ২.৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশ গভীরভাবে সম্পর্কিত।ফলে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিকভাবে তুরস্ক লড়াই করবে, এমনটা চিন্তার বাইরে।

সূত্র : ইউরেশিয়ান টাইমস

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us