নির্বাচনে জিতেও বিপাক সু চি
সু চি - ছবি : সংগৃহীত
চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না জানিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সমর্থিত বিরোধী দল আরেকটি ভোটের আয়োজন করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) জানিয়েছে, ভোট সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি তাই তারা নির্বাচন কমিশনকে আবার ভোট গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
এনএলডি বলেছে, এমন অভিযোগ করা হবে বলে তারা আগেই অনুমান করেছিলেন। তবে যেকোনো অনিয়মের অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেন। এনএলডির মুখপাত্র মিয়ো নিয়ন্ত বলেন, সবসময়েই কিছ মানুষ দাবি করে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাদের উচিত তাদের অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা। এ ব্যাপারে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।
অথচ এর আগে এই নির্বাচনের ফল মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির সেনাপ্রধান। এই নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে। মিয়ানমারে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখের বেশি। দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও মানুষ ভোট দিতে বের হয়েছিলেন। মিয়ানমারের দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের ৪৪০ এবং উচ্চ কক্ষ জাতীয় পরিষদের ২২৪ আসনের মধ্যে ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দেখভালও সেনাবাহিনী করে।
বাকি আসনগুলোতে গত রোববার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি ফলে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) এগিয়ে রয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ১৫৮টি আসনের মধ্যে এনএলডি পেয়েছে ১৩০টি। আর ইউএসডিপি পেয়েছে মাত্র ১৫টি আসন।
প্রাথমিক ফলে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে থাকার খবরের পর গত সোমবার অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দলটি জয় দাবি করে। এনএলডির দাবি, তারা এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ৩২২টি আসনেই জয় নিশ্চিত করেছে।
এই নির্বাচনকে অং সান সু চির এনএলডির নেতৃত্বাধীন নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের প্রশ্নে গণভোট হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। মিয়ানমারে সু চির দল ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দলটির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল জয় পাওয়া সু চির ইমেজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকটাই ধসে গেছে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যার’ ঘটনাপ্রবাহে তার ‘নীরব সমর্থনের’ কারণে।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) এই নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। মিয়ানমারে অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী ও সেনাসমর্থিত সরকারের অবসান ঘটিয়ে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় এনএলডি। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত শুক্রবার মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানালেও সেখানকার ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানকার প্রায় তিন লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি। বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে নামের অধিকার গ্রুপ এবারের নির্বাচনকে জাতিবিদ্বেষী নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, মিয়ানমারের নির্বাচন উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হয়নি। দেশটির বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০ লাখ মানুষ ভোটবঞ্চিত হয়েছেন।
সূত্র : রয়টার্স