পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদেরকে আলাদা দল করার দরকার আছে?
আব্বাস সিদ্দিকি - ছবি সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের কি তাদের নিজস্ব দল থাকা উচিত? কারণ এ ধরনের দল নিশ্চিতভাবে মধ্যমপন্থী-জাতীয়তাবাদী-সেক্যুলার দলগুলোর ভোট কমিয়ে দেবে এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির বিজয়কে আরো নিশ্চিত করবে? না কি তাদের উচিত তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মতো দলগুলোর দ্বিতীয় সহযোগী হিসেবে কাজ করা?
২০১৬ সালের আসাম নির্বাচনে ইঙ্গিত মিলেছে যে, মুসলিম ভোট মধ্যমপন্থী-জাতীয়তাবাদীদের হারানো এবং বিজেপির বিজয়ের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। আসামে বিজেপির বিজয়ের কারণে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে মূলত মুসলিমদের টার্গেট করা হয়েছে। সে কারণেই আসন্ন নির্বাচনে আসামের মুসলিম নেতৃত্বাধীন দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) ও কংগ্রেস একটা মহাগাটবন্ধন করার ব্যাপারে মোটামুটি ৯৫% রাজি হয়ে আছে বলে এআইইউডিএফের ভেতরের একটি সূত্র জানিয়েছে।
২০১৬ সালে এআইইউডিএফ আর কংগ্রেস আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে বিজেপি ক্ষমতায় যায়, যেখানে ৩০ শতাংশের বেশি মুসলিম রয়েছে।
আইমিম অনেক রাজ্যেই কংগ্রেসের অবস্থানের ক্ষতি করছে এবং রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা প্রায় নিয়মিত আইমিমের সমালোচনা করেন এবং তাদেরকে বিজেপির দ্বিতীয় বা তৃতীয় দল হিসেবে বর্ণনা করেন।
২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির কাছে উত্তর ও মধ্য বাংলায় ১১টি আসনের মধ্যে নয়টি হারিয়েছে, যেখানে আইমিম কোন ভূমিকায় ছিল না। ২০২১ সালে যদি আইমিম প্রার্থী দেয়, তাহলে তৃণমূলের দুর্দশা আরো বহু বেড়ে যাবে।
সম্ভবত এ কারণেই তৃণমূলের প্রধান মমতা ব্যানার্জি বলেছেন যে, মুসলিম ভোটারদের টানার জন্য আইমিম ‘বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে’। আইমিম অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মতিন বলেন, যুক্তিটা হলো নির্বাচনী রাজনীতিতে আইমিম বা মুসলিম দলগুলোর তৎপরতা কংগ্রেস বা তৃণমূলের মতো সেক্যুলার ফ্রন্টগুলোকে হারিয়ে দিচ্ছে এবং এটা একটা ‘বিচ্ছিন্নতার’ প্রক্রিয়া।
মতিন বলেন, “এটা খুবই আপত্তিকর যে, আইমিম যখন কংগ্রেসের সাথে ছিল (২০০৪-২০০৯), তখন তাদের সেক্যুলার দল মনে করা হয়েছে, কিন্তু এখন তাদেরকে বিজেপির এজেন্ট বলা হচ্ছে। এই সংকীর্ণ বিচ্ছিন্নতাবাদ – সাম্প্রদায়িক সেক্যুলার বিভাজনের এই ধারণা তৈরি করেছে সরকারী মুসলিম আর রাজনৈতিক দলগুলো। এটা খুবই বিভ্রান্তিকর”।
তিনি মনে করেন, সামাজিক ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য মুসলিমদের এখন একটা দলের খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িক-সেক্যুলার বয়ান প্রায়ই গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং শিক্ষা ও চাকরির মতো সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করে। সে কারণে, মুসলিমরা যদি আলাদাভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়, তাহলে সেখানে মোটেও ভুলের কিছু নেই”।
মতিন উল্লেখ করেন, “দিন শেষে আইমিম বা এআইইউডিএফের মতো মুসলিম দলগুলো আসলে নিজেদের সম্প্রদায় থেকে উঠে আসছে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যেই কাজ করছে। তথাকথিত সেক্যুলার দলগুলোর সাথে যে সব মুসলিম নেতারা রয়েছে, তাদের চেয়ে মুসলিম দলগুলোর নেতারা বেশি সক্রিয় এবং তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি অধিক দায়বদ্ধ”।
তিনি এটা অস্বীকার করেন না যে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান না হলে ‘চলমান মুসলিম রাজনৈতিক পুনর্জন্ম’ হয়তো সম্ভব হতো না। কিন্তু সব নেতিবাচকতার মধ্যেই কিছু ইতিবাচক দিক থাকে বলে যুক্তি দেন তিনি।
আইমিমের অবশ্য একটা অসুবিধা রয়েছে। এই দলটি মূলত হায়দ্রাবাদের (যেখানে এটা মূলত উর্দুভাষী বা মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত হিন্দুস্তানী ভাষাভাষির দল)। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গে ৯০ শতাংশ মুসলিমই কথা বলে বাংলায়। আর পশ্চিম বঙ্গের অবাঙালি মুসলিমদের সাথে বাঙালি মুসলিমদের ঐতিহ্যগতভাবে একটা সমস্যা চলে আসছে, কারণ অবাঙালি মুসলিমরা তাদের আর্থিক শক্তির কারণে বেশি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন, যেটা কলকাতাতেও দেখা যায়।
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের ইস্যু নিয়ে কাজ করেন তরুণ সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডল। তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জি অনেক বছর ধরেই শুধু অবাঙালি মুসলিমদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন”।