বাইডেনকে বিপাকে ফেলতে আটঘাট বাঁধছেন নাছোড় ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
ফলাফল একেবারেই স্পষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যপাট সামলাতে বাইডেন–কমলার ট্রানজিশন টিমের প্রাথমিক প্রস্তুতিও সারা। নাছোড় ডোনাল্ড ট্রাম্প তবু রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন না। জানিয়েছেন, ২০২০–র সাধারণ নির্বাচনের এখনো বাকি। ‘নিখুঁত’ ও ‘সৎ’ ভোট গণনার জন্য যথাসম্ভব পদক্ষেপ করবেন। সেইসঙ্গে ঝাল মেটাচ্ছেন পুরনো সঙ্গীদের ওপর। বরখাস্ত করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারকে।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন হয়েছিল মার্কিন মুলুকে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই দিয়ে শুরু হয়েছিল গণনা। হারছেন, ইঙ্গিত পেয়ে কারচুপির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকি দেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। বিভিন্ন রাজ্যে কারচুপির বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। যদিও প্রমাণের অভাবে তা ধোপে টেকেনি।
রিপাবলিকান পার্টির ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারপার্সন রনা ম্যাক ড্যানিয়েল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ‘নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি। এখনো অনেক বাকি। নিখুঁত ও স্বচ্ছ গণনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। আমরা সেইসব মার্কিনির অধিকারের জন্য লড়ছি, যারা রিপাবলিকান পার্টিতে আস্থা রেখেছিলেন। শুধু এই নির্বাচন নয়, আগামী সব নির্বাচনে যাতে তাদের আস্থা বজায় থাকে, আমরা সেই উদ্দেশ্যেও লড়ছি।’
ডেমোক্র্যাট পার্টি ভোটার পরিচিতি, ভোটদাতাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ, সইসাবুদ মিলিয়ে দেখার বিরোধী। সুতরাং তারা কারচুপিতে প্রচ্ছন্ন মদত দেয়। ঘুরিয়ে অভিযোগ করেছেন ম্যাক ড্যানিয়েল।
এবার ভোটে অন্যতম নির্ধারক রাজ্য ছিল পেনসিলভ্যানিয়া। সেখানে ২০টি ইলেক্টোরাল কলেজ। প্রথাগতভাবে রিপাবলিকানদের এই রাজ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা কারচুপির অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ যাবৎ রিপাবলিকান নেতারা সংযত ছিলেন। কারচুপির অভিযোগে সেভাবে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়াননি। দলের সেনেটর মিচ ম্যাককনেলের সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প। তার মতে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ১০০% নিজের অধিকারের মধ্যে আছেন। নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে তিনি প্রশ্ন করতেই পারেন। আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারও জানিয়েছেন, যে যে রাজ্যে গণনায় কারচুপির অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। তার এই মন্তব্যের জেরে ইস্তফা দিয়েছেন আমেরিকার বিচার বিভাগের শীর্ষ আইনজীবী রিচার্ড পিলগার। সহকর্মীদের পাঠানো ই–মেইলে পিলগার জানিয়েছেন, ব্যালট কারচুপির অভিযোগে আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেলরা হস্তক্ষেপ করেন না। ৪০ বছরের এই নীতির পরিবর্তে সম্ভবত নতুন কোনো নীতি আনতে চান বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল বার। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কারচুপির অভিযোগে প্রথম থেকেই সায় দিয়েছেন বার।
এদিকে খবর ছিল, স্ত্রী মেলানিয়া বুঝিয়েছেন। বুঝিয়েছেন জামাই ও অন্যতম প্রচার সচিব জারেড কুশনার। তবু অবস্থান থেকে নড়ছেন না ট্রাম্প। এই অবস্থান বজায় রাখলে বিবাদ মিটতে আরো কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। মাঝ ডিসেম্বর আমেরিকার ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের নির্বাচন। তত দিন অবধি লড়াইটা টেনে নিয়ে যেতে পারেন ট্রাম্প।
জানুয়ারির আগে নতুন সরকার দায়িত্বে আসছে না। এর মধ্যে ক্ষোভে, হতাশায় আজ তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। পরিবর্তে ওই পদে নিযুক্ত করেছেন তার বশংবদ ক্রিস্টোফার সি মিলারকে। বিদায়ী প্রেসিডেন্টের টুইট, ‘ক্রিস দারুণ কাজ করবেন। মার্ক এস্পারকে বরখাস্ত করা হলো। তার পরিষেবার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ সদ্য ভারত ঘুরে গিয়েছেন এস্পার। ভারত–আমেরিকা দু’দেশের প্রতিরক্ষা স্তরের বৈঠকে।
ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ এস্পারের একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার। সেখানে এস্পার বলেছেন, তিনি কখনো ট্রাম্পের ‘ইয়েস ম্যান’ হয়ে কাজ করেননি। এস্পারের কথায়, ‘কখনো আমাকে বলতে শুনেছেন, ট্রাম্পের অসাধারণ নেতৃত্ব ইত্যাদি ইত্যাদিতে আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি সাফল্য পেয়েছি?’
ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কোন্দলের মধ্যে আরো একটু প্রশাসনিক কাজ এগিয়ে রাখলেন ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক ডা. বিবেক মূর্তির নেতৃত্বে করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় টাস্ক ফোর্স ঘোষণা করেছেন। নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস টুইট করেছেন, ‘বাইডেন এবং আমি আমাদের দেশের নতুন ইতিহাস রচনায় তৈরি।’ কমলা জানান, ‘প্রথম দিন থেকে আমরা নজর দেব এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে, যা নজর দেবে খেটেখাওয়া পরিবারগুলোর দিকে।’ তাদের ট্রানজিশন টিম আগেই জানিয়েছে, অতিমারী এবং তার জেরে আর্থিক সঙ্কট লাঘবে মন দেবে বাইডেন–হ্যারিস প্রশাসন। জোর থাকবে জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে আবার যুক্ত হবে আমেরিকা।
বাইডেনের একটি পুরনো সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করেছে নতুন টিমের ‘ইকনমিক রিকভারি অফ দ্য ট্রানজিশন’ দলিল, যেখানে বাইডেন বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের পরিশ্রম এবং সততাই আমেরিকার আর্থিক যন্ত্র সচল রাখে। বলেছিলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে সম্মান দাবি করেন সাধারণ মহিলা ও পুরুষ, যারা রোজ সকালে উঠে কাজে গিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখেন। তারাই আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগান।’
এই সঙ্কটের সময়ে আমেরিকার শ্রমজীবী মহলের জন্য ভালো বেতনের লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান বাইডেন।
সূত্র : আজকাল