তেজস্বীর তেজে ম্লান ‘মোদির ম্যাজিক’
তেজস্বী - ছবি : সংগৃহীত
টান টান উত্তেজনা শেষ। ভারতের বিহার রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা প্রায় হলো বলে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এনডিএ জোট সরকার গঠনের পথে। তাও ম্লান এই জয়। একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসন পেয়েছে লালুপুত্র তেজস্বীর দল আরজেডি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাত ২:০৩ পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী মোট ২৪৩টি আসনের মধ্যে একক দল হিসেবে ৭৪টি আসন নিজেদের ঝুলিতে পুড়েছে তারা। বিজেপি সেখানে ৭০টি আসন পেয়েছে আর জেডিইউ ৪১টি। আপাতত ২৪৩ আসনের মধ্যে ২৩৬টি আসনের জয়ী ঘোষণা করে দিয়েছে। বাকি ন’টি আসন। যেখানে জোট হিসেবে এনডিএ এগিয়ে রয়েছে ১২৫টি আসনে। মহাজোট এগিয়ে রয়েছে ১১০টি আসনে। অন্যান্যদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটি ৮।
তেজস্বীর বয়স মাত্র ৩১। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, তারুণ্যের প্রবল প্রকাশে তেজস্বী প্রায় উল্টে দিয়েছিলেন নীতীশ সরকারকে। মোদী সহ তাবর তাবড় নেতারাও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। বিহারের এনডিএ–এর এই জয়ে কোনো বীরত্ব নেই বিজেপির ও জেডিইউ–এর। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আবার গদি ফিরে পেলেন নীতীশ কুমার। পরপর চার নম্বর বার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি। শুভেচ্ছাবার্তা সারা দেশ থেকে। কিন্তু তেজস্বীর তেজে প্রমাণ হলো, জেলে বসে থেকেও লালুপ্রসাদ যাদব নেপথ্য লড়াইটা ভালোই লড়লেন।
তেজস্বী একেবারে শেষ মুহূর্তে পরাজয় স্বীকার করে নিলেন বটে, কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজেপি যেভাবে এই নির্বাচনের জন্য প্রচার করেছিল, তারপরেও এনডিএ তেজস্বীর চাপে প্রায় নুয়ে পড়েছিল আর কী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফলাফল উল্টাটাও হতে পারত। যদি তেজস্বী কংগ্রেসের হাত না ধরতেন। কংগ্রেস ব্যর্থতাই ডোবাল মহাজোটকে। তেজস্বী হাজার চেষ্টা করেও সেই ব্যর্থতার ছায়া থেকে বেরোতে পারলেন না। পরিসংখ্যান থেকে তা স্পষ্ট। মহাজোটে কংগ্রেসের হাতে ছিল ৭০টি আসন। তার মধ্যে মাত্র ১৯টি আসন নিজেদের দখলে করতে পেরেছে তারা।
মহারাষ্ট্রের এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার তেজস্বীর প্রশংসা করেছেন। তার বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদি নিজে প্রচার চালিয়েছেন বিহারের হয়ে। তাও এনডিএ–কে সহজে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেননি লালু–পুত্র। বিহারের এই ভোটগণনা যেকোনো রুদ্ধশ্বাস হলিউড থ্রিলারকে হার মানাবে। দেড় বছর আগে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ক্লাইম্যাক্স প্রধান নাটক দেখা গিয়েছিল, তা বিহারেও দেখা যাবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এত কম মার্জিন নিয়ে কোনো সরকারই শান্তিতে কাজ করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। তেজস্বী বিধান সভায় নীতীশের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের দাবি তুলতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই।
অন্যদিকে বিহারে ভালো ফল করেছে বামপন্থীরা। রাত ২:০৩ পর্যন্ত পাওয়া খবর বলছে, মোট ১৬টি আসনে জয় লাভ করেছে বামেরা। নিঃসন্দেহে খুবই উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। এই প্রথম বিহারে কোনও মার্ক্সবাদী দল এতগুলো আসন লাভ করল। যেখানে তাদের হাতে মিলিতভাবে কেবল ২৯টি আসন ছিল। সিপিআই(এমএল) ১২টি, সিপিআই ২টি এবং সিপি(এম) ২টি করে আসন পেয়েছে।
বিহারে জয়লাভ করার পর বিজেপির এবারের নজর থাকবে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির বিজেপি নেতা, কর্মীদের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা বাসা বাঁধল, তাকে প্রতিহত করার মতো শক্তি বিজেপি বিরোধী নেতাদের কতটা রয়েছে, তার অগ্নীপরীক্ষা সামনেই। দেখা যাক ২০২১ সালের শেষ হাসিটা কে হাসে।
সূত্র : আজকাল