আজারবাইজানের কাছে পরাজয় : আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পালিয়ে যাওয়ার গুজব
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পালিয়ে যাওয়ার গুজব - ছবি : সংগৃহীত
নাগার্নো-কারাবাগে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি কার্যত আর্মেনিয়ার পরাজয়েরই সামিল। যুদ্ধের সময়ই তারা বিশাল এলাকা খুইয়েছে। আবার এখন যুদ্ধবিরতির পর তাদেরকে অবশিষ্ট এলাকা থেকেও সরে যেতে হবে।
এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর আর্মেনিয়ার রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ হচ্ছে। জনসাধারণ প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ানের পদত্যাগ দাবি করছে।
এর মধ্যেই গুজব সৃষ্টি হয়েছে যে তিনি পালিয়ে দেশত্যাগ করেছেন।
তবে তিনি মঙ্গলবার ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি আর্মেনিয়াতেই আছেন। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করছেন।
আর্মেনিয়ার পার্লামেন্টে স্পিকারকে গণপিটুনি
নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া-আজারবাইজান চুক্তির ঘোষণা দেয়ার পরই বিক্ষুব্ধ জনতা আর্মেনিয়ার পার্লামেন্টে ঢুকে দেশটির স্পিকার আরারাত মির্জোয়ানকে চরম লাঞ্চিত করার পাশাপাশি গণপিটুনি দেয়।
এসময় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানকে ক্ষমতা ছাড়ার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে রাজধানী ইয়ারেভান।
বিক্ষোভকারীরা এসময় বক্তব্য দেয়ার মঞ্চ দখল করে এবং চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। তারা পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে বেশ কিছু বোতল ছুঁড়ে মারে।
বেশ কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে জড়ো হয়ে সংসদ সদস্যদের আসনে বসে ‘পদত্যাগ করুন!’ ও ‘বিদায় নেন!’ বলে চিৎকার করতে থাকে।
বিক্ষুব্ধ জনতা পার্লামেন্ট ভবনের বেষ্টনি ভেঙে হামলা চালালে পুলিশ বিশৃঙ্খল জনতাকে থামাতে ব্যর্থ হয়। তারা গেট ও বিভিন্ন আসবাব ভেঙে ফেলে।
এর আগে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইয়েরেভেনের সরকারি সদর দফতরের বাইরে জড়ো হয়ে ভবনে হামলা চালায়, অফিসের আসবাব ও জানালা ভাঙচুর করে।
স্থানীয় গণমাধ্যমও স্পিকারের উপর আক্রমণ ও গণপিটুনির কথা জানিয়েছে।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, বিপুল সংখ্যক মানুষ একসাথে সরকারি ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে। প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্টের গেট ভেঙে ফেলে।
তাস আরো জানায়, পুলিশ শক্তি প্রয়োগ না করে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছিল। এসময় ক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যাত্রা করতে শুরু করে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান ফেসবুক বার্তায় বলেন, এই কঠিন মুহূর্তে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকব।
এর আগে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ চুক্তিকে তার ও জনগণের জন্য 'খুবই বেদনাদায়ক' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সেরা বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত। এটা কোনো বিজয় নয় কিন্তু নিজেকে পরাজিত না ভাবলে এখানে কোনো পরাজয় নেই।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন।
নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক ১৯৯১ সাল থেকে উত্তেজনা বিরাজমান। তবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
এরইমধ্যে আর্মেনিয়া বারবার আজারবাইজানের বেসামরিক লোক ও সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেছে, এমনকি তিনটি মানবিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
আজারবাইজানের প্রায় ২০ ভাগ অঞ্চল প্রায় তিন দশক ধরে অবৈধভাবে আর্মেনিয়ার দখলে রয়েছে।
সূত্র : দি নিউজ, বিবিসি, তাস ও ডেইলি সাবাহ