চীনের ব্যাপারে কী করবেন বাইডেন

মাসুম খলিলী | Nov 10, 2020 06:10 pm
বাইডেন

বাইডেন - ছবি সংগৃহীত

 

নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে জো বাইডেনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি বিশ্ব জলবায়ু ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ যেসব বৈশ্বিক সংস্থা থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন সেখানে ওয়াশিংটনকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এর মাধ্যমে বাইডেন এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন বলে মনে হয় যে, বিশ্ব নেতৃত্বে আমেরিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে ইউরোপের যে মতব্যবধান সৃষ্টি হয়েছিল তার একটি কারণ হলো বৈশ্বিক দায়িত্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে আসা। বাইডেন এই দূরত্বটা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পারেন।

উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তি চীনের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক এখনকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধের শুরু, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীনসাগর ইস্যু নিয়ে কট্টর অবস্থান, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে সীমিত করতে ভারতসহ চারপাশের দেশগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়ে চীনা নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত ভারসাম্য ভেঙে ফেলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। চীনের সাথে সম্পর্কের এই সমীকরণে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য যাই থাকুক না কেন, আমেরিকান ক্ষমতাবলয়ের মোটাদাগে অনুমোদন রয়েছে বলে মনে হয়।

ফলে চীনের ব্যাপারে বিশেষত দক্ষিণ চীনসাগরে বেইজিংয়ের আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা ও তাইওয়ানের ব্যাপারে বিশেষ সমর্থন থেকে ওয়াশিংটন সরে আসবে বলে মনে হয় না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ এবং চীন থেকে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে তা ভারত বা অন্য দেশে স্থাপনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তাতে বিরতি আসতে পারে। ট্রাম্পের এই উদ্যোগে বহু মার্কিন কোম্পানি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। চীনের সাথে আমেরিকান বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও বাজার সুবিধার মধ্যে যে এক ধরনের সমন্বয় ছিল তাতে আঘাত হেনেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প চীনের সাথে যে বাণিজ্যযুদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন তার অনেক কিছুই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রীতি-নীতির খেলাপ বলে বেইজিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এটি পুনর্বিবেচনা করতে পারেন বাইডেন। সার্বিকভাবে বাইডেন শাসনে চীনের সাথে কৌশলগত বৈরিতার মধ্যেও এক ধরনের কাজের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। আর করোনা-উত্তর সময়ে চীনবিরোধী সর্বাত্মক লড়াইয়ের যে ডংকা ট্রাম্প বাজাচ্ছিলেন সেটি কিছুটা স্তিমিত হতে পারে। তবে করোনা বিস্তারে চীনের পরিকল্পিত সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বৈশ্বিক নীতি প্রণেতারা নিশ্চিত হলে অন্য এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে চীনের ব্যাপারে। ইউরোপের এক সেনাপ্রধানের আরেক মহাযুদ্ধের হুঁশিয়ারিতে সে ধরনের ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃশ্যত দুজন সরকারপ্রধানের সাথে সুখানুভূতির সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। একজন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অন্যজন ইসরাইলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মোদি যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের এক নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দিয়ে আবার ট্রাম্পের দরকার বলে মন্তব্য করেন। সেই ট্রাম্পের পরাজয়ে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো টানাপড়েন হবে কি না সেই আলোচনা এখন হচ্ছে। ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণের উদ্যোগ ওবামা প্রশাসনের সময়ও ছিল। ওবামা নিজে ভারতকে এই অঞ্চলের নেতা বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের ব্যক্তিগত দর্শনের সাথে মোদি মতবাদের বিশেষ মিল থাকায় এ সম্পর্ক বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হয়। জো বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় উগ্রতা অপছন্দ করেন। বিজেপির রাষ্ট্র পরিচালনার উগ্র দর্শনেরও তিনি বিভিন্ন সময় সমালোচনা করেছেন। অন্য দিকে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভারত-জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত হলেও তিনি একাধিকবার মোদির কাশ্মির নীতির সমালোচনা করেছেন। এসবের প্রভাব ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গভীরতাকে যে মাত্রাতেই হোক না কেন, কমাতে পারে।

মোদির সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও তারা আফগানিস্তানে শান্তি-প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার জন্য পাকিস্তানের সাথে একপর্যায়ের সম্পর্ক বজায় রেখে আসছিল। এ ক্ষেত্রে চীনের অতি ঘনিষ্ঠতাকে বাধা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল পেন্টাগন থেকে। এমনকি নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার একটি উদ্যোগের সাথেও ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন সম্পর্ক রয়েছে বলে বলা হচ্ছিল। বাইডেন ক্ষমতায় চলে এলে সে এজেন্ডা এবার আর সামনে এগোবে বলে মনে হয় না। ডেমোক্র্যাট শাসনের সাথে নতুন পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদের সম্পর্কের উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রাম্পের পুরো মেয়াদজুড়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয়ার ব্যাপারে অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। রাশিয়ান মিডিয়াগুলোর খবর পর্যবেক্ষণ করলেও মনে হয় দেশটি ট্রাম্পকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় দেখতে চাইছে।

বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ওয়াশিংটন-মস্কোর পুরনো বোঝাপড়া অব্যাহত না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। ট্রাম্প তার পররাষ্ট্র কৌশলে রাশিয়াকে ছাড় দিয়ে চীনকে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বাইডেনের সময়ে ক্রেমলিন আবার মূল প্রতিপক্ষের স্থানে চলে আসতে পারে। সম্ভবত এ কারণে এ কলাম লেখা পর্যন্ত পুতিন বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us