মধ্যপ্রাচ্যে যে খেলায় মেতেছিলেন ট্রাম্প

মাসুম খলিলী | Nov 10, 2020 06:02 pm
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু - ছবি সংগৃহীত

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য কৌশল ছিল সবচেয়ে আলোচিত। ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য নীতি সাজিয়েছেন তার ইহুদি জামাতা কাম উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের পরামর্শমতো। আর কুশনার ও তার টিম মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সব কিছু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পরামর্শে করেছেন বলে মনে করা হয়। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ এবং জর্দান উপত্যকা ও পশ্চিম তীর অঞ্চলকে ইসরাইলের মানচিত্রভুক্ত করতে সম্মতি দেয়া এ সব কিছুই নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা অংশ মনে করা হয়। সর্বশেষ উপসাগরীয় দেশগুলোকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই স্বীকৃতি দিতে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই চাপের কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে গিয়েছে। ওমান ও সৌদি আরবের কথাও বলা হয়েছে যে, তারা খুব দ্রুত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে।

ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন এই অতি কট্টর ইসরাইলবান্ধব নীতি অনুসরণ করবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্পের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে ছিলো। এখন বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্পের নেয়া সব কাজ আগের অবস্থানে হয়তো নিয়ে যাবেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলের সাথে একাকার করে ফেলা থেকে নিবৃত হতে পারেন। হামাস বাইডেনের নির্বাচিত হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে। ফাতাহও ইতিবাচকভাবে দেখছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কোনো না কোনো ফর্মে আবার আলোচনায় আসতে পারে বাইডেনের এই মেয়াদে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ইরানের পরমাণু চুক্তি। বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প। ইসরাইলের অভিবাসন মন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, মার্কিন প্রশাসন আবার এ চুক্তিতে গেলে ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ হতে পারে। এরপরও বাইডেন পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করতে পারেন। এটি ঘটলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আবার প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে ইরান। একই সাথে একেবারে চীন-রাশিয়ান বলয়ের ভেতরে চলে যাওয়া থেকে তেহরান নিবৃতও হতে পারে।

এই ইরান নীতির ওপর সৌদি ও আমিরাতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেকখানি নির্ভর করতে পারে। ওবামার আমল থেকেই সৌদি আরবের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপড়েন চলে আসছিল। ট্রাম্পের সময় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্তে এ সম্পর্ক আবার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। বাইডেনের আশপাশে এমন কথা এখন শোনা যায় যে, মার্কিন প্রশাসন একনায়কদের আর পৃষ্ঠপোষকতা দেবে না। সেটি সত্যি হলে মধ্যপ্রাচ্যে অনেক ধরনের পরিবর্তন সূচিত হতে পারে।

বাইডেনের জয়ের পর মুসলিম ব্রাদারহুড তাকে স্বাগত জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বহুমত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থার প্রতি নতুন প্রশাসন সম্মান জানাবে। ব্রাদারহুডের এই প্রত্যাশার আড়ালে অনেক বার্তা যুক্ত রয়েছে বলে মনে হয়।

তবে বাইডেন ক্ষমতায় আসায় মধ্যপ্রাচ্যে ব্রাদারহুডকে সমর্থনকারী দেশ তুরস্কে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬ সালে এরদোগানের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রে ওবামা-বাইডেন ক্ষমতায় ছিলেন। ওই অভ্যুত্থানের পেছনে ওবামা প্রশাসনের মদদ ছিল বলে মনে করা হয়। সম্ভবত এ কারণেই তুর্কি নেতৃত্ব এখনো বাইডেনকে অভিনন্দন জানানোর জন্য অপেক্ষায় আছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়েই বাইডেন তুরস্কে গণতান্ত্রিকভাবে শাসন পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ নিয়ে আঙ্কারায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। এ কথা সত্যি যে, চার বছর আগে তুরস্কের যে অবস্থা ও ভূমিকা ছিল সেটি এখন অনেক পাল্টে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো ভূমিকা পালন করতে হলে তাদের এই ন্যাটো মিত্রকে উপেক্ষা করার অবস্থা নেই। আর এরদোগান ও একে পার্টির শেকড়ও এখন দেশটির ক্ষমতাবলয়ের অনেক গভীরে।

বাইডেন এখন প্রশাসন সাজানোর প্রক্রিয়ায়। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে বোঝা যাবে বাইডেন ঠিক কোন দিকে তার নীতি-কৌশলের তরী বাইবেন। তবে বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতার অধিকারী সত্তরোর্র্ধ্ব বাইডেন এমন একসময় দেশের হাল ধরতে চলেছেন যখন পরিবর্তনের নতুন এক ঢেউ মনে হয় বিশ্বের নানা প্রান্তে উথলে উঠতে শুরু করেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাণ্ডারি পরিবর্তনের এই ক্রান্তিলগ্নে অপেক্ষা করতে হবে কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে ঢেউ তোলে তা দেখার জন্য।

mrkmmb@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us