পদ হারানোর পর ট্রাম্পদের পারিবারিক ব্যবসায় মন্দা!
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই করেছিলেন, তবে শেষরক্ষা করতে পারেননি। জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এদিকে, সম্প্রতি তার ট্যাক্স রেকর্ডগুলো থেকে উঠে এসেছে আর্থিক সঙ্কটের লক্ষণ। রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়াও মার্কিন ব্যবসায়িক মহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্লেখযোগ্য নাম। কিন্তু সেই ব্যবসাই কয়েক মিলিয়ন ডলার ক্ষতি দেখছে। এমনকি পারিবারিক ব্যবসাও বিশ্বজুড়ে একাধিক চুক্তি করা থেকে সরে এসেছে সঙ্কটের কারণে।
ক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমায় থাকা ট্রাম্পের তবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে? ব্যবসাতেই কি ফিরে যাবেন ধনকুবের ট্রাম্প? এই মুহুর্তে পারিবারিক ব্যবসা চাইছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নয়। ২০১৬ সালের আগে হোটেল, গলফ ক্লাবগুলো একচেটিয়া অর্থ জুগিইয়ে গিয়েছিল ডোনাল্ডকে। সেই ব্যবসাতেই ফিরুন সাবেক প্রেসিডেন্ট এমন আশাই রাখছেন সকলে।
হোয়াইট হাউস পরবর্তী কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন ট্রাম্প সে পরিকল্পনার বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ট্রাম্প সংস্থার মুখপাত্র। এদিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে একটি বিতর্কিত বিবৃতি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন তিনি হেরেছেন বলে বিশ্বাস করেন না।
এদিকে চার বছর আগে রাষ্ট্রপতি পদে বিজয়ী হওয়ার পরে ট্রাম্প সংস্থায় নিজের অংশ বিক্রি করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং পরিবর্তে এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন যা তিনি বলেছিলেন যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দূর হবে। এদিকে কয়েক বছরে যে ক্ষেত্রগুলো থেকে সর্বোচ্চ অর্থ উৎপাদন হতো সেগুলো প্রায় অচল হতে শুরু করেছে।
নতুন বিদেশী চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞার ফলে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে হোটেল ব্যবসা। সংস্থার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তির মতে, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন এখন হোটেল চুক্তি এবং অন্যান্য ব্যবসায়ের সন্ধান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের সুপ্রিম কোর্ট যাওয়ার পথে ‘কাঁটা’ অনেক
ভোটের ফল বাইডেনের পক্ষে যেতেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ‘ভোট কারচুপির’। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করতে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে যেতে চান তিনি একথা সোশাল মিডিয়া সমক্ষেই জানিয়েছেন।
তবে ‘সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়’। ঠিক যেমন সহজ নয় এই আইনি আশ্রয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে সুপ্রিম কোর্ট যাওয়া এবং আইনি লড়াইয়ে অসুবিধায় পড়তে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। ঠিক এমন এক পরিস্থিতি হয়েছিল ২০০০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। তবে নির্বাচনে জালিয়াতির ঘটনা আমেরিকায় বিরল। যদিও ট্রাম্প ২০০০ সালের প্রসঙ্গ এনেই জানিয়েছেন এবারের নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের জড়িত হওয়া উচিত।
যে ঘটনার কথা ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্লেখ করেছে তা ঠিক কুড়ি বছর আগের কথা। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন রিপাবলিকান দলের জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং ডেমোক্র্যাট আল গোর। ফ্লোরিডায় ভোট পুনর্গণনার আবেদন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিজয়ী ঘোষণা করা হয় রিপাবলিকান জর্জ বুশকে। ২০০০ সালে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হতে এক মাসের বেশি সময় লেগে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ফলাফল চূড়ান্ত হয়। সেই সময় আদালতের লিবারল এবং কনজারভেশনদের মধ্যে ৫-৪ ভোটে জয়লাভ করেন বুশ।
কিন্তু সমস্যা হলো এবারে কনজারভেটিভসদের মধ্যে তিনজনকে ট্রাম্প মনোনীত করলেও কুড়ি বছর আগের চিত্র আর আজকের নির্বাচনের ছবি অনেকটাইও আলাদা। বুশ শুধুমাত্র ফ্লোরিডাতে পুনর্গণনা বন্ধের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিলেন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক রাজ্যে তা করতে চাইছেন। এক্ষেত্রে আইনে কী কী বিচারপদ্ধতি থাকতে পারে সেটিও এখনও পরিষ্কার নয়।
নির্বাচনে পিছিয়ে পড়তে শুরু করলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট কারচুপিকে সামনে আনেন, কিন্তু প্রমাণ ছিল না কোনও। তাই ভোট গণনায় রিপাবলিকান নেতার অভিযোগ প্রভাব ফেলতে পারছে না বরং দেশের মানুষ এই অভিযোগকে বরখাস্তই করেছেন। ট্রাম্পের কথায়, “আমরা মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে যাব। আমরা চাই যে সমস্ত ভোটদান বন্ধ হয়ে যাক। যা ঠিক করার সুপ্রিম কোর্ট করবে।”
আসলে সুপ্রিম কোর্টে যাব বললেই আর যাওয়া যায় না। হোক না তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আইনের নিয়ম সকলের জন্য এক। তাই এক্ষেত্রে ট্রাম্পকেও নিম্ন আদালতে আগে এই মামলা আনতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিপক্ষ জো বাইডেনও জানিয়ে দিয়েছেন দরকার পড়লে তিনিও আইনি পথে হাঁটবেন। তবে এখন যা ভোট চিত্র সেখানে তিনি আইনের থেকে ‘রাজনীতি’তেই আস্থা রাখতে চাইছেন।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস