করোনার নতুন বিপর্যয় শুরু হতে যাচ্ছে ভারতে?
করোনার নতুন বিপর্যয় শুরু হতে যাচ্ছে ভারতে? - ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাসকে ‘হারিয়ে’ অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল ভারত। কিন্তু ফের করোনা হানায় বিপর্যস্ত ইউরোপের একাধিক দেশ। এমনকী মার্কিন মুলুকেও ফের দাপট বেড়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের। কিন্তু একমাত্র চিত্রে বদল এসেছে ভারতে। দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। কিন্তু মার্কিন মুলুক কিংবা ইউরোপের ট্রেন্ড বলছে ফের কোভিড ঝড়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হতে পারে ভারতকে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন প্রফেসর সুনেত্রা গুপ্ত।
এমন কি কোনো নজির রয়েছে যেখানে নিজে থেকেই অতিমারীর বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা তৈরি হয়?
যখন কোনো নতুন প্যাথোজেন আক্রমণ করে তখন তার বিরুদ্ধে দেহে কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। এর ফল মারাত্মক হয়। যেমনটা করোনার ক্ষেত্রে হয়েছে। এবার যখন কমিউনিটিতে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন ইমিউনিটি তৈরির একটা ধাপ শুরু হয়। যদিও খুব অল্প হারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ব্রাজিলে যখন জিকা ভাইরাস আক্রমণ করে তখন ভয়ঙ্কর অবস্থা। কিন্তু আসতে আসতে ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। তার মানে এই নয় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ হবে না। কিন্তু ঝুঁকি কমেছে অনেকটা।
করোনার ক্ষেত্রেও কি এমনটা হবে?
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা একই। সিস্টেমে কোনো ফাঁক আছে কি না দেখতে হবে। উদাহরণ দিয়ে বলতে হলে একটি ট্যাঙ্কে যতটা পানি ঢালা হচ্ছে, আর যতটা পানি বেরোচ্ছে তা সমান হলে ইমিউনিটি ঠিক থাকবে। এক্ষেত্রে যে পানি ঢুকছে তা হলো রিইনফেকশন। তবে এই ভাইরাস যদি সারস-কোভ ২ অন্য ভাইরাসের মতোই হয় সেক্ষেত্রে রিইনফেকশনে মৃত্যু কমই হবে।
এই অ্যান্টিবডির স্থায়ীত্ব কতটা? অনেক দেশে তো পুনরায় সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে?
অ্যান্টিবডিগুলোর ক্ষয় হতেই থাকে। তাই জনসংখ্যার কত অনুপাত ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে তা প্রকাশ করতে এই সংখ্যাকে ব্যবহার করতে পারবেন না। এটি বলা ভুল যে অ্যান্টিবডিগুলোর ক্ষয় মানে প্রতিরক্ষামূলক অনাক্রম্যতা ক্ষয় হচ্ছে। করোনাভাইরাসের আগের ঘটনা আপনাকে রিইনফেকশন থেকে কিছুটা প্রতিরোধ করবে।
ইউরোপে করোনার নয়া পর্যায় শুরু হয়েছে। কতটা ভয়ানক?
বেশ কিছু দেশ করোনা নিয়ম মেনে চলেনি। যেমন সুইডেন। সেই দেশটি থেকে কিন্তু এটাই শেখার যে নিয়ম না মানলে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হতে পারে। অন্য দিকে যদি নিউজিল্যান্ডকে দেখি অনেক কিছু শিখব। করোনা হানার সময় কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছিল। ছোট দেশ হলেও নিউজিল্যান্ড কিন্তু এখনো করোনামুক্ত।
ভারতে কীভাবে নিয়ম মানা উচিত অন্তত বিদেশের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে?
সুইডেন একটা উদাহরণ হতে পারে। পুরো লকডাউনে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আইসোলেটেড থাকা। কলকাতায় আমার মা-বোন সেভাবেই থাকছে। বস্তিবাসীদের সে সুযোগ না থাকলেও মধ্যবিত্তদের কিন্তু থাকছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র বন্ধ করে দেয়া হলে অনেকের না খেতে পেয়ে মৃত্যু হবে তার চেয়ে নিয়ম মেনে চললে উপকার হবে বেশি।
ভারতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে?
হ্যাঁ। ভারতের অনেক জায়গায় এই অনাক্রম্যতা গড়ে উঠেছে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তবে তা অঞ্চলভিত্তিক। এটা মনে রাখতে হবে সকলেই কিন্তু অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে না। ভারতকে বিভিন্ন ধরণের করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সে জন্য একটা ক্রস ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। সেই কারণে মৃত্যু এবং সংক্রমণ হয়ত কমেছে কিছুটা। কিন্তু ভারত তো অনেক বড় দেশ। সেই বিচার করলে দেখা যাচ্ছে এখনও অনেকটা ইমিউনিটি তৈরি বাকি।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস