ইসলামে পোশাকের বিধান
ইসলামে পোশাকের বিধান - ছবি সংগৃহীত
আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। আর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৯১) মানুষের সৌন্দর্য, রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব যার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় তা হলো পোশাক। বাংলায় পোশাক শব্দটির কুরআন-হাদিসের ভাষা হলো ‘লিবাস’। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে আর অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার পোশাক; আর তাকওয়ার পোশাকই উত্তম।’ (আল কুরআন-৭ : ২২) আল্লাহর নিয়ম মেনে জান্নাতে সর্বপ্রথম পোশাক পরেছিলেন হজরত আদম ও হাওয়া আ:। আর তা কৌশলে খোলার ব্যবস্থা করেছিল মানবতার প্রকাশ্য শত্রু ইবলিশ নামের প্রাণীটি।
পোশাক খুলে নগ্ন করে দেয়ার বিষয়টি খুবই ন্যক্কারজনক বলেই মহান আল্লাহ তায়ালা তা কুরআনে স্থান দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের ওপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল।’ (আল কুরআন-৭:২২) তাহলে দেখা গেল পোশাক যদি নাও থাকে মুসলমানদের নগ্ন থাকা যায় না। গাছের পাতা দিয়ে হলেও লজ্জা রক্ষার চেষ্টা করতে হয়। আর দ্বিতীয়বারের মতো জাহেলি যুগে হজ পালনকারীদের বিভ্রান্ত করে পবিত্রতম স্থান আল্লাহর ঘর কাবাঘরের তাওয়াফ করার সময়ও শয়তান পোশাক খুলতে সক্ষম হয়েছিল এই বলে যে, তোমাদের (সেই সময়ের হাজীদের) পরনের সব পোশাক যেহেতু হারাম অর্থের তাই এ পোশাকও হারাম হওয়ায় তাওয়াফ কবুল হবে না।
জাহেলিয়াতের যুগে হজের কার্য সম্পাদনের সময় পোশাক খুলে তাওয়াফের আইন করে শয়তান নগ্ন করে দিয়েছিল এবং সে সময়ের জনগণ লুফে নিয়ে তা বহু বছর পালন করেছিল। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আগমনের পর মানব জীবনের যত পর্যায় রয়েছে তার সর্বত্র তিনি আল্লাহর কাছ থেকে সবার জন্য এনে দিলেন কালজয়ী আদর্শ, বিজ্ঞানময় সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তার মধ্যে শালীন ও উপকারী পোশাক অন্যতম। আর পোশাকের সংজ্ঞা ও বিধিনিষেধ জারি করলেন কোন পোশাক শালীন পরিধান করা উচিত আর কোনটি পরিত্যাজ্য। নিজে প্রচলিত সমাজের পোশাক পরে পৃথিবীর সব পোশাক তিনি স্বাধীনভাবে পরার অনুমতি দিলেন শুধু ক্ষতিকর পোশাক ছাড়া।
অসংখ্য গ্রহণযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, আল্লাহর রাসূল সা: বৈধ কাপড়ও পুরুষের টাখনোর নিচে পরা (বুখারি হাদিস নং ৫৪৫০), রেশমি কাপড়, শরীরের অভ্যন্তর দেখা যায় এমন পাতলা কাপড়, অন্য ধর্মের ধর্মীয় পোশাক, বেদ্বীনদের সংস্কৃতির অংশ এমন পোশাক, এমন পোশাক যা পরলে উলঙ্গ মনে হয়, বিপরীত লিঙ্গের পোশাক, এতটুকু কাপড় পরা যাতে সতর ঢাকে না, অতিমাত্রায় লাল ও হলুদ রঙের, বিকৃত রুচির, শরীরের আকৃতি প্রকাশ করে এমন আঁটসাঁট পোশাক, কৃপণতা প্রকাশ করে এমন পোশাক এবং অহঙ্কারের পোশাক নিষেধ করেছেন। সবচেয়ে প্রশংসনীয় পোশাক হলো যে রঙ, কাটিং ও ডিজাইন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা: পরেছেন। ইসলামে অননুমোদিত পোশাক যেহেতু চিহ্নিত তাই পোশাকের স্বাধীনতার সীমানা ব্যাপক ও সীমাহীন।
আর তিনি মুমিন মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন এমন কিছু পোশাক যা তার পুরো দেহের কোনো অংশকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকাশ করে। কারণ নারীর আপাদমস্তক যৌনাঙ্গের ন্যায় ঢেকে রাখার হুকুম রাখে। তার বৈধ পোশাকও এতটা আকর্ষণীয় হবে না যা অন্যকে আকর্ষণ করে। শ্রমজীবী, কর্মজীবী বা গৃহিণী যে-ই হোক না কেন একই হুকুম সমানভাবে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে যে নারী নিজ দেহের যতটুকু যতবার যতদিন গাইরি মাহরামের সামনে প্রকাশ করবে সে ততটুকু ততবার ততদিন হারাম কাজের পাপী হবে। শুধু তা-ই নয়, এরকম নারী পরিবার ও সমাজের জন্য অভিশাপের কারণ। ইসলাম নির্দেশিত পোশাক পরা নিছক কোনো সংস্কৃতি নয়, কোনো দলের বা মতের ইউনিফর্ম নয়, এটা সুস্পষ্ট ইবাদত। যা পালনে রয়েছে সওয়াব ও পালন না করলে রয়েছে নিন্দা বা জাহান্নাম।
কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের নিয়ম দ্বারা এ ইবাদত সীমাবদ্ধ হবে না। ইসলামে অনুমোদিত সব পোশাকই ইসলামী। কোনো সন্ত্রাসী, বেদ্বীন কাফির-মুশরিক যদি ইসলামের পোশাক পরে কোনো অপকর্ম করে তবে সে দায় ইসলাম ও মুসলমানের নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পোশাক পরিধানের হুকুম দুটি-
১. ফরজ এবং ২. উত্তম ও বৈধ।
ফরজ পোশাক পরতে যদি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সমাজ বা রাষ্ট্র বাধা দেয় তবে তা মানা যাবে না। সে ক্ষেত্রে হয় তার প্রতিবাদ করতে হবে নচেত সে স্থান পরিত্যাগ করতে হবে।
দ্বিতীয় হুকুম অনুযায়ী উত্তম বলতে ইসলামের মডেল ও আদর্শ মুহাম্মদ সা:-এর কাটিং ও ডিজাইনে পোশাক পরিধান করা এবং বৈধ বলতে ইসলামে নিষেধ নয় এমন পোশাক পরিধান করা। বিষয়টি ব্যক্তির ঈমানি জোর, ব্যক্তিগত রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে তার আবেগ ও অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। কোনো বাধা বা নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাময়িক ছাড় দেয়া যেতে পারে তবে চিরতরে ছেড়ে দেয়া যাবে না। আর স্বাধীনতা থাকলে উত্তমটা গ্রহণ করাই উচিত। এক্ষেত্রে সমালোচনা, কটূক্তি বা বাঁকা চাহনিকে পাত্তা দেয়া ঠিক হবে না।
প্রত্যেক মুমিনের উচিত হারাম পোশাক পরিধান থেকে বেঁচে থাকা এবং উত্তম পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত হওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন।
লেখক : আরবি প্রভাষক, শহর গোপিনপুর ফাজিল মাদরাসা