বাইডেনের জয়ে ইরান খুশি, নাখোশ আমিরাত!
রুহানি ও বাইডেন -
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পট বদল হলো। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় হলো, ক্ষমতায় এলেন জো বাইডেন। এর ফলে কোন দেশে তার কী প্রভাব পড়ল একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
ভারতের সঙ্গে বরাবরই আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। যা বাইডেন এলেও বদলাবে না বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তার উপর ইন্ডো–পেসিফিক অঞ্চলে চীনকে আটকে রাখতে ভারতের সঙ্গে আমেরিকা সম্পর্কের তার মজবুত করতেই চেষ্টা করবে। তবে বাইডেনের সঙ্গে মোদির সম্পর্ক কীরকম হবে তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাইডেন বরাবরই স্পষ্টবক্তা। কাশ্মীরের প্রত্যেক মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, সিএএ, এনআরসি–র তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন প্রচারেই। নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট, কমলা হ্যারিসও কিছু কিছু হিন্দু সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তবে ভারতীয় মায়ের মেয়ে কমলার এই বিশাল উত্থানের কারণে দেশে একটা উৎসব এবং আনন্দের আবহাওয়া যে তৈরি হয়েছে তা অনস্বীকার্য।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জয়ে কিছুটা হলেও অখুশি চীন। এমনটাই মনে করছেন সমীক্ষকদের একাংশ। তার কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের একা চল নীতির ফলে আমেরিকার সঙ্গে তার বন্ধু দেশগুলির অনেকের সম্পর্কে তিক্ততা এসে গিয়েছিল। যার লাভ উঠিয়ে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে এগোচ্ছিল চীন। কিন্তু বাইডেন আমেরিকার বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে পুরনো নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পর্ক ফের মেরামত করতে চাইবেন। তাহলে সেটা চীনের উচ্চাশার পথে বাধা হতে পারে। এছাড়া বাইডেনের জয় গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণহীন চীনের শাসন ব্যবস্থার পক্ষেও বড় চ্যালেঞ্জ।
উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম অবশ্য ট্রাম্পের হারে অখুশিই। কারণ বাইডেন দাবি করেছেন, কিমের সঙ্গে যে কোনও বৈঠকের আগে উত্তর কোরিয়া যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে ইচ্ছুক তা তাদের স্পষ্ট করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া তাদের প্রতিবেশীকে কোনোরকম উস্কানিমূলক পথে না যেতে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। কিমের সঙ্গে ট্রাম্প যে দেখা করার সাহস দেখিয়েছিলেন, তার প্রশংসাও করেছিল। এবার বাইডেন তা করেন কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখবে তারা।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক কিছুটা হলেও টাল খেতে পারে। কারণ ডেমোক্র্যাট বাইডেনের সঙ্গে ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বরিস জনসনের সম্পর্ক বরাবরই খারাপ। বাইডেন বরিসকে একবার ট্রাম্পের ক্লোন বলেও কটাক্ষ করেন। তাই বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, লন্ডনের বদলে ব্রাসেলস্, বার্লিন, প্যারিসের সঙ্গে হয়ত এখন ওয়াশিংটন ডিসি–র সম্পর্ক দৃঢ় হতে চলেছে।
রাশিয়া মনে করছে বাইডেন আরো চাপ দেবেন এবং আরো নিষেধাজ্ঞা চাপাবেন। সম্প্রতি একটি রুশ দৈনিকে লেখা হয়েছিল, ট্রাম্প জমানায় দুদেশের সম্পর্ক সমুদ্রগর্ভে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু বাইডেনের আমলে তা আরও গভীরে যেতে পারে। তবে ট্রাম্প সরকারের থেকে বাইডেন সরকারের নীতি অনেক স্পষ্ট হবে বলেই আশা করছে মস্কো। ফলে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টাই করবে ক্রেমলিম।
জার্মানি অবশ্য স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। কারণ মাত্র ১০ শতাংশ জার্মান ট্রাম্পকে বিশ্বাস করতেন। মুক্ত বাণিজ্য এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল বার্লিনের অর্থনীতি। ট্রাম্প তাই পাল্টে দিয়েছিলেন। চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঝামেলার ফলে জার্মানির রফতানিকারীদের খুব সমস্যা হয়। বাইডেনের আমলে সেই সব সমস্যার থেকে মুক্তি মিলবে বলেই আশা বার্লিনের।
বাইডেনের জয়ে খুশি ইরানও। কারণ তিনি বলেছিলেন তিনি কূটনৈতিকভাবে পরমাণু চুক্তি করতে চান তেহরানের সঙ্গে। তবে সহজে ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনা হয়ত সম্ভব হবে না। তিন তারিখ আমেরিকার নির্বাচনের দিনই ইরানের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও তাতে ইরানের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হবে না।
আমেরিকার সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যের নীতি নিয়ে হয়ত ঠিক সেভাবেই এগোতে চাইবেন বাইডেন, যা তিনি ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এবং তিনি নিজে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ছেড়ে গিয়েছিলেন। যা নিয়ে শঙ্কিত ইসরাইল, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো। কারণ তারা মনে করছে এর ফলে হয়ত আবার ইরান–ইসরাইল সংঘর্ষ বাঁধতে পারে।
মিসরের সামরিক শাসক আবদুল ফাতাহ্ আল–সিসির সঙ্গে ট্রাম্পের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। মিসর প্রতিবছর ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা পেত আমেরিকা থেকে। এখন নতুন করে বাইডেনের সঙ্গে সেই সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করবেন আল–সিসি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবশ্য ট্রাম্পের মিসরে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি উদাসীনতার সমালোচনা করত। এবার সেই সমস্যা মিটবে বলেই তাদের আশা।
কিউবা অবশ্য বাইডেনের জয়ই চাইছিল। কারণ ট্রাম্পের চার বছরে তার চাপানো নিষেধাজ্ঞার ফলে সেদেশের মানুষদের প্রায় নাভিশ্বাস উঠছিল। আরো চার বছর তাদের পক্ষে ট্রাম্পকে মেনে নেয়া অসহ্য ছিল।
কানাডার সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক এমনিতে ভালো হলেও বাইডেনের জয়ের মিলতেই সেখানেও স্বস্তির শ্বাস পড়েছিল সবার। কারণ ট্রাম্প জমানায় দুদেশের সম্পর্ক কিছুটা কোণঠাসা ছিল।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী আগেও বলেছিলেন তার সঙ্গে বারাক ওবামার সম্পর্ক খুবই ভালো। বাইডেনের সঙ্গে তাই ট্রুডো সরকার আবহাওয়া পরিবর্তন সহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পাবে। মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
সূত্র : আজকাল