ট্রাম্পের ওপর ক্ষেপেছেন সামরিক বাহিনীও!
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
কেন দেরি হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায়? একটি কারণ নিশ্চয়ই ভোটের পরিমাণগত দিক। আগের নির্বাচনের তুলনায় দেড় কোটির মতো বেশি ভোট পড়েছে। কিন্তু আরো বড় কারণটি পদ্ধতিগত। করোনা–বছরের এই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ভোট পড়েছে ৩ নভেম্বরের নির্ধারিত নির্বাচনের দিনের আগে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ আবার মেইল–ইন ব্যালট, মানে ডাকে পাঠানো ব্যালট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রাজ্যগুলোতে সমস্যা বা বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এই ডাক–ব্যালট। বিতর্কটা অবশ্য তৈরি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী তথা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, ‘গোনা বন্ধ করো’। শুধু ‘বৈধ’ ভোটই গোনা হবে, এই তার বক্তব্য। মানে ব্যালটে পাঠানো ভোট খারিজ করে দিতে বলছেন তিনি। ট্রাম্পের কথায় তাজ্জব বনে গেছে দেশের নানা মহল, সংবামাধ্যমও। নিয়ম মেনে আগাম ভোটের ব্যবস্থা হয়েছে, ডাকে পাঠানো ভোট ৩ নভেম্বরের পরে আসতে পারে বলে তা গ্রহণ করার সময়ও বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও তা’ই। বাদ সাধতে গিয়ে জর্জিয়ায়, মিশিগানে আদালতে ঠোক্কর খেয়েছে ট্রাম্প–শিবির। সে তো গেল এক কথা। ট্রাম্পের কথায় আহত সামরিক মহলও। বিদেশে থাকা ফৌজিদের পাঠানো ডাক ব্যালটও কি তিনি খারিজ করে দিতে চাইছেন?
ক্ষুব্ধ সামরিক মহল। জর্ড ডব্লু বুশের আমলে ডেপুটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করা নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল স্টিভ অ্যাবটের মন্তব্য, ‘সরকারি স্তরে সবাই মিলে ট্রাম্পকে বোঝান, স্যার, বাকি দেশের মতো আপনারও সংযত হওয়া উচিত।’ নিজেকে সামরিকবাহিনীর মুখ বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তিনি অবশ্য পরে এ কথাও বলেছেন, সামরিকবাহিনী ছাড়া অন্যদের ডাক–ব্যালট বাতিল হোক। তাতে প্রশ্ন উঠছে, যখন–তখন এমন আলাদা মাপকাঠি তৈরি করা যায় নাকি! ১৮১২–র যুদ্ধের সময় থেকেই বাইরে কর্তব্যরত সামরিকবাহিনীর সদস্যদের ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর রীতি স্বীকৃত। ২০০৯ সালে কংগ্রেস একটি বিল পাশ করে, যাতে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলি যেন সেনা–সহ অনুপস্থিত নাগরিকদের ব্যালট দেয়ার বন্দোবস্ত রাখে। ২৮টি রাজ্য এবং কলম্বিয়া ৩ নভেম্বরের পরও ব্যালট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। নর্থ ক্যারোলাইনায় ১২ তারিখ পর্যন্ত ডাকে আসা ব্যালট গ্রহণ করা হবে, নেভাডা এবং পেনসিলভ্যানিয়ায় ১০ তারিখ পর্যন্ত।
ভোটের পরও এবার মহামারীর কারণেই সশরীরে আগাম ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ডাক–ব্যালটের ব্যবহার বিরাট হারে হয়েছে। ট্রাম্পের প্রশ্ন, ডাক–ব্যালটের ভোট কেন একতরফা? কিন্তু সবাই জানেন, ডেমোক্র্যাটদের তরফে ডাক দেয়া হয়েছিল, কোভিড পরিস্থিতিতে আগেভাগেই ভোট দিয়ে নিন, ডাক–ব্যালট ব্যবহার করুন। রিপাবলিকানরা কোভিডের তোয়াক্কা না করে মূলত ভোট দিয়েছেন ৩ তারিখই। সন্দেহ নেই, আগাম ভোট ও ডাক–ব্যালটের ফল চূড়ান্ত ‘রণভূমি’ বলে পরিচিত পেনসিলভ্যানিয়ার মতো রাজ্যগুলোতে ভোটের চিত্র বদলে দিয়েছে। জর্জিয়াতেও এগিয়ে গেছেন বাইডেন। ব্যবধান কম বলে সেখানে পুনর্গণনা হবে, জানিয়ে দেয়া হয়েছে এর মধ্যেই। এখনো কেন বিদেশ থেকে ফৌজিদের ভোট আছে? ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছে, গড়ে ৬ দিন সময় লাগে ব্যালট পৌঁছোতে। তাদের ভোট কি ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে?
অসম্ভব নয়। বড় ব্যবধানের ফলে হয়তো এই ভোট গুরুত্বহীন হয়ে যায়, কিন্তু জর্জিয়ার মতো সামান্য ব্যবধানের ফলে প্রভাব ফেলতেই পারে। জর্জিয়ায় ৮,৯০০ ব্যালট ছাড়া হয়েছে বিদেশে কর্তব্যরত ফৌজিদের জন্য। শেষ খবর পর্যন্ত, জর্জিয়ায় বাইডেন এগিয়ে আছেন হাজার চারেক ভোটে।
সূত্র : আজকাল