ট্রাম্পের পরাজয়ের বিশেষ দুটি কারণ
ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের আর দু’টি কারণ বলে রাখা যাক। তার মধ্যে এক হল, কালো মানুষদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিপুল প্রচার। এর ফলেই সে দেশের উদারবাদী মানুষদের একাংশ ট্রাম্পের ওপর বিপুল চটেছেন। আর থাকল সময় মতো কোভিড প্রতিষেধক আবিষ্কার না-হওয়া। বিজ্ঞানকে খুব একটা দখল করতে পারেননি ট্রাম্প। মিল পাবেন ভারতেও, স্বাধীনতা দিবসে তাই লালকেল্লায় টিকা জোটেনি। বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং ওষুধ নিয়ে গোলমেলে ব্যবসা চলে বিশ্ব জুড়ে। আমেরিকা সেই ব্যবসায় নেতাগিরি করছে অনেক দিন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে এখনও গণহারে অসততার ঘনত্ব কম। তাই ভোটপ্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিলেও তাড়াহুড়ো করে প্রতিষেধক নামিয়ে দেয়ার মতো সাহসী কাজ তিনি করে উঠতে পারেননি।
ট্রাম্প আর জো বাইডেন তো নিমিত্তমাত্র। শেষ করা যাক গণতন্ত্রের জয় এবং পরাজয় দিয়ে। এই পরিস্থিতিতেও মানুষ ভোট দিয়ে রেকর্ড করেছেন। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে বোঝা যাচ্ছে, মোট ভোট পড়েছে গত বারের থেকে ১ কোটির মতো বেশি, যা কিনা প্রায় ৬-৭ শতাংশ। তবে এই নির্বাচন নিয়ে যা হল, তা আমেরিকার মতো একটা দেশের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়। তার একটা বড় কারণ অবশ্যই ট্রাম্প এবং আগাম ভোটের তুরুপের তাসে মাত হলেন তিনি। এখন হেরে গিয়েও হার না-মানার খেলায় নেমেছেন দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রনায়ক। মার্কিন দেশে এখনো তিনি দু’মাসের ওপর ক্ষমতায় থাকবেন। ভোটফল বেরিয়ে গেলেও সে দেশে ক্ষমতার হাতবদল হয় পরের বছর। সুতরাং একুশের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা। এর মধ্যে ট্রাম্প সাহেব যদি রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের শি জিনপিং, উত্তর কোরিয়ার কিম, তুরস্কের এরদোগান- এদের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক সেরে ফেলেন, তা হলে জীবৎকালে প্রেসিডেন্ট থেকে যাওয়ার সফল মন্ত্র শিখতে পারবেন। আর দয়া করে কোর্টে না গিয়ে যদি গণতন্ত্রকে ক্ষমা করেন, তা হলে পরীক্ষা শুরু বাইডেনের। ২৭০-ই পান কিংবা ৩০০, জেতার পর আসনের আর দাম নেই। এত কৌশলের পরেও সেনেট সম্ভবত থেকে গেল রিপাবলিকানদের হাতেই। অন্তত সামনের দু’বছরের জন্য। ওবামা এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তার রাজত্বের শেষ দু’বছরে। সাম্প্রতিক কালে মার্কিন দেশে বিভাজন আরও স্পষ্ট। ফলে বাইডেন আর রাতের ঘুমে জমিয়ে নাক ডাকার সুখ পাবেন বলে মনে হয় না।
আর ভারতে বসে এই লেখা। তাই এটাও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, বাইডেনের সঙ্গে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ দেশের রক্তের সম্পর্ক থাকলেও, বিজেপির সঙ্গে কিন্তু মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সুসম্পর্কের কথা খুব জানা নেই। বরং কাশ্মীর নিয়ে একাধিক বার বেসুরো গেয়েছেন কমলা হ্যারিস। অন্য দিকে কোভিড পরিস্থিতির জনক চীনকে বেশ ভালোই ধমকাচ্ছিলেন ট্রাম্প। ব্যবসা আর রাজনীতির স্বার্থেই হয়তো বাইডেন আবার সেই জায়গাটা কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন। সেটাও ভারতের বর্তমান সরকারের পক্ষে ভালো খবর নয়। সব মিলিয়ে তিন দিন একটানা মার্কিন দেশের নির্বাচন অনুসরণ করে আমরা কী পেলাম সেটা একেবারেই পরিষ্কার নয়। তবে শেষ হেমন্তে গা তো ঘামল! এ বার নজর বিহারের দিকে। বাম-কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে তেজস্বী বাইডেন হতে পারবেন কি?
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা