মার্কিন রাজনীতিতে আরেক জো
জো জরগেনসেন - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। শনিবার পেনসিলভেনিয়ার ফল ঘোষণার পরে স্পষ্ট হয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্বের অবসান ঘটতে চলেছে। জয়ী ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। হেরে গেছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আর এই দু’জনের পরেই সর্বোচ্চ ভোট যিনি পেয়েছেন, তিনি লিবার্টেরিয়ান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো জরগেনসেন। এই নির্বাচনে দেশের ১.২ শতাংশ ভোট ইতিমধ্যেই তার ঝুলিতে। প্রায় ১৬ লাখ ভোট পেয়েছেন তিনি। যা বাইডেন বা ট্রাম্প— যে কারো ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা নিতে পারত। সেই কারণেই উৎসাহ তৈরি হয়েছে জোকে ঘিরে।
৬৩ বছরের জো সাউথ ক্যারোলাইনার ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিদ্যার অধ্যাপক। রাজনীতির ময়দানে তিনি নতুন নন। বরাবর লিবার্টেরিয়ান দলের সমর্থক জো ১৯৯২ সালে সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েন তিনি। আর এ বছর মে মাসে ওয়াশিংটন ডিসি-সহ আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে লিবার্টেরিয়ান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনীত হন।
আমেরিকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের নানা নীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব জো। গণগ্রেফতার, বিদেশের মাটিতে সামরিক অভিযান ও সেনা-মোতায়েন এবং জমকালো যুক্তরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন— এ সবের বিরোধিতা করে আসছে তার দল। এ বারও প্রচারে নেমে জো সেই দাবিতে অনড় থেকেছেন। এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রচার ভিডিয়োয় জো-কে বলতে শোনা গিয়েছে, সুইৎজারল্যান্ডের মতো আমেরিকাকেও তিনি ‘সামরিক বলে বলীয়ান’ অথচ পক্ষপাতহীন এক মহান দেশ হিসেবে দেখতে চান। ভোটে জিতলে বিদেশের মাটি থেকে আমেরিকার সেনা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। ফেডারেল আয়কর তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন জো।
১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা। ৪৯ বছরেই আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এসেছে লিবার্টেরিয়ানরা। মুক্ত অর্থনীতি, ক্ষুদ্র প্রশাসন এবং সর্বোপরি ব্যক্তি ও নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এরা। দলের ওয়েবসাইটে লেখা আছে সেই আদর্শের কথা— ‘‘প্রত্যেক আমেরিকাবাসীর স্বাধীন ভাবে বাঁচবার অধিকার আছে। অন্যকে আঘাত না করে নিজের জীবনের লক্ষ্যে তাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত।’’
এ বারের নির্বাচনে একটিও ইলেক্টোরাল ভোটে জেতেননি জো। তবে উইসকনসিন, মিশিগান ও নেভাডার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জো-এর ভোটের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তিন রাজ্যেই বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে যে ভোট-পার্থক্য রয়েছে, তার থেকে বেশি ভোট টেনেছেন জো। জর্জিয়ায় মতো রাজ্যে, যেখানে ট্রাম্প আর বাইডেনের মধ্যে লড়াই চলেছে সমানে সমানে— সেখানে জো পেয়েছেন ১.২ শতাংশ ভোট। বিশেষ করে পশ্চিমের রাজ্যগুলোর গ্রামীণ এলাকায় জো ভালো ভোট পেয়েছেন। আলাস্কা এবং নর্থ ডাকোটায় ২.৭ শতাংশ, সাউথ ডাকোটায় ২.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন জো। এখন পর্যন্ত ১৬ লাখ ভোট পাওয়া জো দলেও দ্বিতীয় জনপ্রিয় নেত্রী। ২০১৬ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবার্টেরিয়ান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ৩.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন গ্যারি জনসন। দলের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা