এখন যেভাবে সময় কাটছে ট্রাম্পের
এখন যেভাবে সময় কাটছে ট্রাম্পের - ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবশেষ ভোট গণনার খবর অনুযায়ী - ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাবার দৌড়ে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন ।
তবে সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনের খবর জানানো আর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা এক কথা নয়।
তাহলে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে বিজয়ী হলেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হবে কখন ও কীভাবে?
এটা আসলে বেশ দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, "এখন পপুলার ভোটগুলো গোণা হচ্ছে । এই গোণা যখন শেষ হবে তখন তা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সার্টিফাই করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা করে থাকেন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নর বা সেক্রেটারি অব স্টেট।"
এর পর ১৪ ডিসেম্বর পপুলার ভোটের ভিত্তিতে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা সমবেত হয়ে তাদের ভোটগুলো দেবেন।
সাধারণত নিয়ম হলো - একেকটি রাজ্যে পপুলার ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হন তিনিই ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান। সেকারণেই পপুলার ভোটের ফল জানার সাথে সাথেই সবাই ধরে নেন যে ইলেকটোরাল ভোটের ফল কী হবে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে কি এমন কিছু ঘটতে পারে যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গিয়েও ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে পারেন?
কী ঘটতে পারে?
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, এ ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দু দিকে সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলছেন, এমন হতে পারে যে ভোটগণনায় যে ফল পাওয়া গেল - তা অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ সার্টিফাই করলেন না। তবে এর সম্ভাবনা কম, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে রাজ্যগুলোর ফল নিয়ে আপত্তি করছেন - সেগুলোও হয়তো অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ সার্টিফাই করবেন।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হতে পারে ইলেকটোরাল কলেজ নিয়ে।
অধ্যাপক রীয়াজ বলছেন, ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব হচ্ছে অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভার।
আইনসভাগুলো চাইলে জো বাইডেনের সমর্থক প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দমত ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারেন।
সেক্ষেত্রে ইলেকটোরাল ভোটের দুটো স্লেট হতে পারে একটা হচ্ছে যা আসলেই পপুলার ভোটের রায় প্রতিফলিত করবে - আরেকটি রাজ্যের আইনসভাগুলোর আলাদা করে পাঠানো রায়।
তারা যে ভোট দেবেন তা আবার গোণা হবে জানুয়ারির ৬ তারিখ কংগ্রেসে। কংগ্রেসের সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি যদি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটগুলোর দুটি স্লেটের একটা রেখে অন্যটা ফেলে দেন বা দুটোর কোনটাই গ্রহণ না করেন - তাহলে একটা সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে।
সংকটটা হলো - ভাইস প্রেসিডেন্ট দুটো স্লেটই প্রত্যাখ্যান করলে কোনো প্রার্থীরই ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট হবে না। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণ করবে কংগ্রেস।
"সেক্ষেত্রে প্রতিটা অঙ্গরাজ্য একটা করে ভোট পাবে। কিন্তু বর্তমানে ২৩টি অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ডেমোক্র্যাটদের, ২৬টিতে রিপাবলিকানদের। এভাবে ভোট হলে ২৬টি ভোট পেয়ে যাবেন ট্রাম্প, এবং তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন। এটা হবে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। তবে হাউজের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হয়তো এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে বা থামিয়ে দিতে পারেন, তাহলে এক পর্যায়ে হয়তো তার হাতে দায়িত্ব এসে পড়তে পারে।"
রিপাবলিকান পার্টি ও ভাইস প্রেসিডেন্টের ভূমিকাই আসল
এই জটিল আইনি পরিস্থিতিতে রিপাবালিকান পার্টির ভূমিকার ওপর নির্ভর করছে যে দেশ কোন সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে পড়ে যায় কিনা।
ভোট জালিয়াতির যে প্রশ্ন তুলছেন ট্রাম্প - তা কতটা বড় সংকট তৈরি করতে পারে?
ড. আলী রীয়াজ বলছেন, "বিশেষত পোস্টাল ভোটে যে জালিয়াতির কথা মি. ট্রাম্প বলছেন, তা তাকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু তার পক্ষের লোকজনের করা এরকম অনেক মামলাই রাজ্য পর্যায়ের আদালতে গৃহীত হচ্ছে না। "
তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, ট্রাম্প আসলে যেতে চাইছেন সুপ্রিম কোর্টে।
"এ ক্ষেত্রে তার একমাত্র পথ হচ্ছে পেনসিলভেনিয়ার আদালতে পোস্টাল ভোটের জন্য তিনদিন পর্যন্ত সময় দেবার ব্যাপারে একটি রায় দেয়া হয়েছিল - যে রায়ের ফুটনোটে একটি মন্তব্য আছে যে রাজ্য পর্যায়ের সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখছে, কিন্তু তা 'আপাতত:' - নির্বাচনের পরে এ মামলায় আবার ফিরে যাওয়া যেতে পারে। "
এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটা আবার নিতে পারে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে এ রায়ের কারণে যাদের পাঠানো পোস্টাল ভোট নির্বাচনের পরের তিনদিন পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে - সেই ভোটারদের মৌলিক অধিকার সংকুচিত হবে। সেটা আরেক ধরণের সংকট তৈরি হতে পারে।
এগুলোকে কেন্দ্র করে কি কোন অস্থিরতা বা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে?
ড, আলী রীয়াজ বলছেন, সেই সম্ভাবনা আছে।
ট্রাম্প তার সমর্থক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা মিলিশিয়াদের পথে নেমে আসার জন্য টুইটারে আহ্বান জানাতে পারেন ।
সেক্ষেত্রে বড় প্রশ্নটা হবে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ এবং ন্যাশনাল গার্ড কী ভূমিকা পালন করে।
ট্রাম্প কি করছেনএখন?
জানা যাচ্ছে, মি. ট্রাম্পের মেজাজমর্জি ভালো নেই। তিনি হোয়াইট হাউজে তার বাসভবন এবং ওভাল অফিসে সময় কাটাচ্ছেন, টিভি দেখছেন, নানাজনকে ফোন করছেন।
তার সমর্থকরা সেভাবে রাস্তায় নামছে না দেখে তিনি ক্ষুব্ধ। হোয়াইট হাউস অনেকটা ফাঁকা, অনেকে কাজে আসেনি। প্রেসিডেন্ট তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের বলছেন যে তিনি আইনি চ্যালেঞ্জের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবেন।
সূত্র : বিবিসি