ভারত কি বাইডেনকে নিয়ে চিন্তিত!
ভারত কি বাইডেনকে নিয়ে চিন্তিত! - ছবি : সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে বারাক ওবামার আট বছর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ ফলে ভারতের কাছে জো বাইডেন পরিচিত মুখই৷ তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত বন্ধু হয়েছিলেন, তেমন সুবিধা কি পাবে নয়া দিল্লি। অবশ্য অনেকেই পক্ষ থেকেই আশা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেখানো পথেই হাঁটবেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে তা বদলাতে পারে৷
প্রতিরক্ষা, কৌশলগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ২০০০ সাল থেকেই ভারতের প্রতি আমেরিকার নীতি খুব একটা বদলায়নি৷ আশা করা হচ্ছে জো বাইডেনও সেই পথেই হাঁটবেন৷ তবে চীনের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের মনোভাব কী হয়, সেদিকে তাকিয়ে থাকবে ভারত৷ কারণ, তার প্রভাব ভারতের উপরে পড়তে বাধ্য৷ তবে বাইডেনের আমলেও ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ঝুলে বাণিজ্যিক সমস্যাগুলোর খুব বেশি সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে না৷ একনজরে দেখে নেওয়া যাক, জো বাইডেনের আমলে কোন পথে এগোতে পারে ভারত- মার্কিন সম্পর্ক-
বাইডেন- হ্যারিস যুগলবন্দি
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস৷ বাইডেন প্রশাসনের নীতি নির্ধারণে তিনি বড় ভূমিকা নিতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷ বাইডেন ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেও একবারের জন্যই মেয়াদে থাকবেন তিনি৷ ফলে ২০২৪-এর নির্বাচনে কমলা হ্যারিসই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে কী নীতি নেন, সেদিকে নজর রাখতেই হবে৷
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা প্রচারে ভারতীয়-মার্কিন ভোটারদের কাছেও সমর্থনের আবেদন করেছিলেন বাইডেন৷ ভারতের প্রতি তার মনোভাব আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক বলেই মনে করা হয়৷ ভারত- মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা বাইডেনের পক্ষেও সম্ভব নয়৷ বাইডেনের হয়ে কৌশল নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা অ্যান্টনি ব্লিনকেনের মতে, ভারতকে বাদ দিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়৷ তাঁর দাবি, বাইডেনের আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মজবুত এবং উন্নত করা অন্যতম অগ্রাধিকারের বিষয় হতে চলেছে৷
প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ২০০০ সাল থেকেই প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত ভাবে আমেরিকার ভারত নীতিতে বিশেষ বদল আসেনি৷ বাইডেনের আমলেও তাতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম৷
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাইডেনপন্থীরা দু' ভাগ৷ এর প্রভাব আমেরিকা- ভারত এবং ভারত- চীন সম্পর্কের উপরে পড়তে বাধ্য৷ বাইডেনের পরামর্শদাতাদের একাংশ ট্রাম্পের মতোই তীব্র চীন বিরোধী৷ আবার একাংশের মতে, আমেরিকা এবং চীনের অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব৷ ফলে খুব বেশি হলে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত ক্ষেত্রগুলিতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার দিকেই হাঁটতে পারে বাইডেন প্রশাসন৷
বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্ষমতায় যেই থাকুন না কেন, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সমস্যা মেটা মুশকিল৷ এমন কি বারাক ওবামার আমলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ ছিলই৷ ফলে বাইডেনের আমলে আমেরিকা ভারতের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দেবে, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ তাছাড়া, প্রচার পর্বেই বাইডেন ফের আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ডাক দিয়েছেন৷ বাইডেনের অন্যতম শীর্ষ পরামর্শদাতা বিল বার্নসও জানিয়েছেন, আমেরিকার বিদেশনীতি এমন হওয়া উচিত যাতে দেশীয় উৎপাদন এবং ব্যবসা চাঙ্গা হয়৷'
মানবাধিকারে নজর তবে ভারতে যেভাবে হিন্দুত্ববাদীদের দাপট বাড়ছে এবং বহু ক্ষেত্রে মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠছে, তার বিরুদ্ধে তৎপর হতে পারে বাইডেন প্রশাসন৷ জম্মু কাশ্মীরের বিভিন্ন ঘটনাও নজরে রাখতে পারে তারা৷ বিশেষ মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পর ভারতে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে৷
এইচ ওয়ান বি ভিসা H-1B ভিসা ফের আগের অবস্থায় ফিরবে, এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ৷ বিশেষত করোনা অতিমারির পর রিমোট ওয়ার্কিং-এর প্রবণতা বৃদ্ধির পর এইচ ওয়ান বি ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন উদার মনোভাব নেবে, সেই প্রত্যাশা না করাই ভালো৷
সূত্র : নিউজ ১৮