ট্রাম্পের পতনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বিশ্বে?

গৌতম দাস | Nov 07, 2020 05:18 pm
ট্রাম্পের পতনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বিশ্বে?

ট্রাম্পের পতনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বিশ্বে? - ছবি সংগৃহীত

 

বিশ্বের চলতি প্রধান ঘটনা হলো, গত ৩ নভেম্বরের আমেরিকার জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল যেখানে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে জিতানোর পক্ষে আগাচ্ছিল। কিন্তু বিজয়ী হতে প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের শেষ ৬টি পূরণ হওয়ার আগেই মনে হচ্ছে তা থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ওদিকে অন্তত একটা রাজ্যে (জর্জিয়া) ভোট পুনঃগণনা শুরু হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের ফলাফলের পার্থক্য ১% এর নিচে হলে সেখানে পুনঃগণনা শুরু হয়ে যায়, কেউ অনুরোধ না করলে। এতে এতক্ষণে যদিও ফলাফলের সামগ্রিক ঝোঁকটা বাইডেনকে বিজয়ী করার দিকে ছিল, কিন্তু যতক্ষণ তা নিশ্চিত নয় ততক্ষণ এ নিয়ে এর চেয়ে বেশি কথা এখনই না বলা ভালো।

ওদিকে ফলাফল পুরা প্রকাশিত হওয়ার আগেই ক্ষমতাসীন ট্রাম্প নিজের বিজয় ঘোষণা করে বক্তৃতা প্রচার করে দিয়েছেন। আর সাথে তিনি এমন একটি ধারণা প্রচার করেছেন যে, তিনি বা তার দল এখন সুপ্রিম কোর্টে অসংখ্য (ভিত্তিহীন হলেও) অভিযোগ নিয়ে একবার হাজির হতে পারলেই আদালত ট্রাম্পের বিজয়ের পক্ষে রায় দিয়ে দেবেন। কিন্তু কেন এমন হবে? এর জবাবটাই তিনি প্রচার করছেন আরেক কানকথা ছড়িয়ে যে, এখনকার সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন বিচারকের মধ্যে ৬ জনের নিয়োগ হয়েছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের হাতে; মানে তারা কনজারভেটিভ চিন্তার। অতএব এ কারণে ট্রাম্পই নিজের জিতার পক্ষে আদালতের রায় পাবেন। কিন্তু আমেরিকার সাধারণ সমাজ ও বিচার সমাজ কি এতই বোকা, অবিবেচক?

কাজেই এই অনুমান ভিত্তিহীন। তবে কিছুটা সত্যতা থাকতে পারে। বিচারকদের কেউ রক্ষণশীল চিন্তার হতেই পারেন; তাই বলে কোনো যুক্তি-প্রমাণ বা শক্ত কারণ ছাড়াই কি তারা রায় দিতে পারেন? এছাড়া আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী ধরনের নির্বাহী ক্ষমতাধারী যা করতে পারেন একজন বিচারক তা পারেন না। সেটা হলো, কোনো নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সে সিদ্ধান্তের পক্ষে কারণ তিনি প্রকাশ্যে নাও বলতে পারেন; ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা’ ইত্যাদির কথা তুলে। কিন্তু একজন বিচারক রায় লেখার সময় কারণ উল্লেখ করে সেটা যে ন্যায়সঙ্গত এর সপক্ষে সাফাই দিয়ে রায় লিখতে হয়।

আর ঠিক সে কারণে এখন আমেরিকান বিশ্লেষকরাই মিডিয়াতে মন্তব্য করছেন, বিচারককে কেবল প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরেই আর ন্যায়সঙ্গত কারণ দেখিয়ে রায় লিখতে হবে। আর এর চেয়েও বড় কথা, বাস্তবে যেসব নির্বাচনী অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে মামলা করা হয় বা এবার হয়েছে সেখানে কথা একটাই বলা হচ্ছে, অভিযোগ আছে কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণসহ অভিযোগ তোলা হয়নি। ফলে বিচারক তা আমলে না নেয়ার সম্ভাবনাই প্রবল হচ্ছে। তাই এক কথায় বললে, ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান দলের ভূমিকা এখন এতই নোংরা ও ধ্বংসাত্মক যে, যেকোনো সময় জনমত তাদের এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।

আমেরিকার সাধারণ নাগরিক সারা দিন এত কঠিন বাস্তবতার মধ্যে কষ্টকর জীবনযাপন ও বসবাস করতে হয় যে, কোনো আবেগে প্রভাবিত হওয়ার চেয়ে এরও আগে কঠিন বাস্তব দিকটা তাদের আগে চোখে পড়ে। আবেগ যেন বিলাসিতা, তাই দূরে থাকে আগে থেকেই। ফলে তারা যখন দেখতে পেয়ে যাবে যে, ট্রাম্প প্রমাণ দেয়ার চেয়ে অভিযোগ তোলার দিকেই বেশি আগ্রহী তখন তারা খোদ ট্রাম্পেরই হাত ছেড়ে হতাশ হয়ে সরে যেতে দেরি করবেন না। এভাবে একবার জন-মনোযোগ হারিয়ে ফেললে এটাই ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার বাস্তব অবস্থা পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলতে পারে। মানুষকে কষ্ট দিতে আর হতাশ করে ফেলতে ট্রাম্প ও তার দল বা সরকারের এসব কাজও আরেক দিকে প্রচণ্ড নষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।

একই সাথে গ্লোবাল নেতৃত্ব পালাবদলের কাল চলছে। যেখানে বাস্তবে গ্লোবাল নেতৃত্ব বদলানোর আগে, খুব সম্ভবত, এটাই শেষ আমেরিকান নির্বাচন অথবা যুদ্ধবাজ রিপাবলিকানদের জন্য শেষ সুযোগ। অর্থাৎ এবার ট্রাম্প যদি জেতেন, তবে গ্লোবাল নেতৃত্ব বদল তাতে থামবে না যদিও কিন্তু একটি যুদ্ধের ভেতর দিয়ে ফলাফল হিসাবে আসবে হয়তো। অর্থাৎ একটি যুদ্ধপরিস্থিতির পরেই কেবল গ্লোবাল নেতৃত্বে পালাবদল ঘটবে। ট্রাম্পের এই মনোভাবের প্রতিক্রিয়াতেই যেমন সারা এশিয়া বিশেষত সাউথ-এশিয়ায় ভারতের পড়শি রাষ্ট্রগুলোতে প্রচণ্ড আগ্রাসী ও চাপ সৃষ্টিকারী হয়ে আমেরিকা গত কয়েক মাস থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত তৎপর ছিল। পম্পেই বা স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্তারা বাংলাদেশসহ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ইত্যাদি দেশে সফরে গিয়ে এমন মরণ-চাপ তৈরি করে চলেছিলেন।

এটি সত্য যে, এবারের আমেরিকান নির্বাচন এত চাপের মধ্যে হওয়ার মূল কারণ গ্লোবাল অর্থনীতির অর্ডারের নেতৃত্বের পালাবদল একেবারেই আসন্ন, তাই। বাইডেন জিতলে সেটি তুলনামূলকভাবে কম উত্তেজনা ছড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ডায়লগের মধ্য দিয়ে ঘটার দিকে যাবে। কিন্তু এসব কিছুকে যা ছাড়িয়ে গেছে তা হলো, বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তানেও- এসব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে নোংরামি আর খোয়াখেয়িতে ভরপুর করে তুলেছে। এরা বাধ্য করছেন এসব দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমেরিকা, ভারত না চীন এভাবে কোনো একটার ‘পা-চাটা দালাল’ হয়ে তারা নিজ দেশটাকেই যেন বিভক্ত করে ফেলেন বেপরোয়াভাবে। আর এতে আস্তে আস্তে সব হারানো ভারতের ভূমিকাও আরো মরিয়া আমেরিকান বরকন্দাজ যেন, যার কাজ হলো নিজের সঙ্কীর্ণ স্বার্থে এসব নোংরামিকে আরো তুঙ্গে তোলা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us