সোমবারে রোজা রাখার ফজিলত

সোমবারে রোজা রাখার ফজিলত - ছবি সংগৃহীত
হজরত কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন, এ ব্যাপারে সাহাবারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এ দিনেই আমি দুনিয়াতে শুভাগমন করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছি।’ ( সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা নং ৫৯১, হাদিস নং ১৯৮)
বর্তমান মুসলিম উম্মাহ নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যার যেভাবে মনে চাচ্ছে সে সেভাবে ধর্ম পালন করার চেষ্টা করছে। কুরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা যেন মাছভাতে রূপান্তরিত হয়েছে। একদল মানুষ ঈদে মিলাদুন্নবীর নামে নতুন একটি ঈদ বানিয়ে নিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবীর বিধান কী সে ব্যাপারে আলোচনা করার আগে আমি বলতে চাই আল্লাহর নবীর জন্ম এটি সারা পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরূপ যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আমি আপনাকে সারা বিশে^র রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৭) সুতরাং যিনি সারা দুনিয়ার মানব দানবসহ সবার জন্য রহমত তাঁর জন্মে খুশি হবে না এমন কোনো মানুষ তো থাকতে পারে না। অন্তত তাকে মুসলিম বলা যাবে না। তাই আমরা এতটুকু নিশ্চিত যে, আমরা রাসূল সা:-এর আগমনে আমরা সবাই খুশি এবং আনন্দিত। তবে মনে রাখতে হবে, এ আনন্দ উৎযাপনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো- যার জন্য আনন্দ উৎযাপন করছি তার মনোপুত হচ্ছে কি না? আর যদি তা না হয় তাহলে তো এ আনন্দ পুরোটাই বৃথা হয়ে যাবে।
মিলাদুন্নবীর তারিখ
মিলাদ অর্থ জন্ম আর নবী অর্থ বিশ্বনবী সা:। সুতরাং মিলাদুন্নবী অর্থ হলো- বিশ্বনবী সা:-এর জন্ম। বিশ্বনবী সা:-এর জন্ম ৫৭০/৫৭১ ঈসায়ি সালে, এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যমত। তবে কোন মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতানৈক্য লক্ষ করা যায়। কেউ বলেন, মহররম মাস কেউবা সফর মাস, আবার কেউ রজব মাস, কেউ কেউ বলেন, রবিউল আওয়াল মাসের কথা। তবে আশ্চায্যের বিষয় হলো-
যারা রবিউল আওয়াল মাসের মত ব্যক্ত করেন, তারাও একমত নন যে, বিশ্বনবীর জন্ম ঠিক কত তারিখ? কেউ মত দেন ৮ তারিখ আবার কেউ বলেন, ৯ কেউ বা ১২ তারিখ বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, এবার তাহলে বলেন তো! রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ কোন যুক্তির আর দলিলের ভিত্তিতে ঈদে মিলাদুন্নবীর নামে বিশাল জশনে জুলুসের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার অর্থ কী? যে উৎসবের দিনটিই অনির্দিষ্ট। তবে একটা বিষয় নিশ্চিতভাবে জানা যায়, বিশ্বনবী সা: সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। আর সে জন্য তিনি এই দিনে রোজা রাখতেন।
হাদিসের আলোকে সোমবার
হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অতঃপর প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করেনি।’ (মুসলিম হাদিস নং ২৫৬৫) অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা রা: বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, সোমবার এবং বৃহস্পতিবার আমলসমূহকে পেশ করা হয়। আর আমি চাই, আমার আমলসমূহকে রোজা অবস্থায় পেশ করা হোক।’ (তিরমিজি হাদিস নং ৭৪৭) হজরত আবদুুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূল সা: সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন, সোমবার নবুয়ত লাভ করেন, সোমবার মৃত্যবরণ করেন, সোমবার মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের জন্য যাত্রা করেন, সোমবার মদিনায় পৌঁছান এবং হাজরে আসওয়াদ পাথরকে কাবার দেয়ালে রাখেন সোমবার। সুতরাং সোমবারের সাথে শুধু জন্মই নয়, রাসূল সা:-এর জীবনের একটি বৃহৎ অংশ জড়িত।
তাই বলি, রবিউল আওয়ালের ১২ তারিখ জশনে জুলুস নয় বরং যদি রাসূলের জন্মে খুশি হয়ে কিছু যদি করতেই হয় তাহলে তা নবীজীর দেখানো পথে করতে হবে। এর তা হলো রাসূল সা: সোমবার রোজা রাখতেন তার অনেক কারণের একটি এও যে, তিনি এই দিনে জন্মলাভ করেছেন। সুতরাং আসুন আমরাও এই দিনে রোজা রাখি । আমিন।
লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট